লেখা : তাপস কুমার দত্ত

প্রতিবার পূজোয় যেমন ভ্রমনে বার হয়ে পড়ি, এবারও তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি এবারে আমরা সবাই মিলে পাঁচ জন ছিলাম আগে থেকে কোনো পরিকল্পনাই ছিলোনা, কিন্তু হরিদ্বার যাওয়া আসার দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট চার মাস আগেই কেটে রেখে ছিলাম অবশেষে সবাই মিলে বসে একটা পরিকল্পনা করে ঠিক হলো প্রথম রাত্রি হরিদ্বারে থেকে পরের দিন বেড়িয়ে পড়বো উখিমঠের উদ্দেশ্যে, এখানে একরাত কাটিয়ে পরের দিন রওনা দেওয়া হবে সারি গ্রামে, এখান থেকেই . কিলোমিটার পথ বোল্ডার ফেলা রাস্তায় ট্রেক করে দেওরিয়াতালে পৌঁছানো যায় ইচ্ছে করলে এখানে তাবুতে অনেকে রাত কাটাতে পারেন আমরা সারিতেই রাত কাটিয়ে ছিলাম পরের দিন সকালে ঠিক ছিলো সারি থেকে চোপতা হয়ে তুঙ্গনাথ দেখা এবং চোপতাতে দুই রাত কাটানো, তারপর সেখান থেকে আবার হরিদ্বার ফিরে আসা

হাওড়া থেকে বেলা টার সময়ে কুম্ভএক্সপ্রেস ধরে পরের দিন রাত সাতটার সময়ে আমাদের ট্রেন হরিদ্বারে পৌঁছালো ট্রেন অনেকটা সময়ই বিলম্ব ছিলো হরিদ্বার স্টেশন থেকে অটো ধরে সোজা চলে গেলাম কাঠিয়াবাবা সেবাশ্রমে সেখানে পৌঁছে নারায়ন সাহা বাবুর আতিথেয়তায় রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে নিদ্রায় গেলাম ভোর পাঁচটা বাজতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো আমাদের সাথে আরো তিনজনের যাওয়ার কথা ছিলো তারা সরাসরি হরিদ্বারের টিকিট না পাওয়ার জন্য পরের দিন বেনারস থেকে ভোরবেলাতে কাঠিয়া বাবার আশ্রমে এসে পৌঁছানোর পর এখান থেকে সকালের চা পান করে ঠিক সকাল . ৩০ সময়ে আমাদের গাড়ি পাড়ি দিলো উখিমঠের পথে হরিদ্বার থেকে গাড়ি করে উখিমঠের যেতে প্রায় ২০৭ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হয় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দয্য দেখতে দেখতে সন্ধ্যা গড়িয়ে পাহাড়ে অন্ধকার নেমে আসলো এবং এক পশলা করে বৃষ্টিও শুরু হয়ে গলো তখন ঠান্ডা বেশ লাগছিলো যাইহোক এইভাবে পথ চলতে চলতে প্রায় রাত সাতটার সময়ে উখিমঠে  আমাদের গাড়ি এসে হাজির হলো উখিমঠের মন্দিরের কাছে একটা জায়গাতে আমাদের থাকর ব্যবস্থা করা হলো একই ঘরে পাঁচজন মিলে রাতটা কাটিয়ে দিলাম

পরের দিন সকাল বেলাতে উখিমঠ দর্শন সেরে সবাইমিলে মৌজ করে এক কাপ করে চা পান করে নিলাম ঠান্ডার মধ্যে এক কাপ চায়ের আমেজ অসাধারন ছিলো তারপর এখান সকাল সারে আটটার সময়ে আমাদের গাড়ি রওনা দিলো সারি গ্রামের দিকে সারি গ্রাম এখান থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটারের পথ পথে প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে কিছু সময়ের মধ্যেই আমরা এসে গেলাম সারি গ্রামে সাজানো গোছানো একটি ছোটো গ্রাম, এখানেই আমাদের ঠিক হয়েছে লাখপথ সিং নেগির হোটেলে এক রাত কাটানো হোটেলে পৌঁছে মাল পত্র গুছিয়ে রেখে এখানেই ম্যাগি দিয়ে জল খাবার সেরে নিলাম বেলা সাড়ে দশটার সময়ে রওনা দিলাম . কিলোমিটার হাঁটা পথে দেওরিয়া তালের উদ্দেশ্যে পুরো রাস্তাটাই খুব চড়াই এবং বোল্ডার ফেলা প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে কোনো জায়গাতে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে আবার পথ চলা, এই ভাবে ঘন্টা দুয়েক পরে অবশেষে দেওড়িয়া তালে এসে পৌঁছালাম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই জায়গার উচ্চতা প্রায় ,৯৯৯ ফুট এবং চারদিক সবুজ বনানীতে ঘিরে আছে এই সবুজ দেখতে দেখতে পথ চলার ক্লান্তি যেন অনেকটাই কেটে যায় তারপর দূরে চৌখাম্বার চূড়ার দৃশ্য অসাধারন এবং ভাগ্য ভালো থাকলে এই শৃঙ্গের প্রতিবিম্ব দেওড়িয়াতালের জলেও দেখা যায় এই দৃশ্য উপভোগ করতে হলে একটা রাত এখানকার তাবুতে কাটালে ভালো হয় দেওড়িয়াতালে প্রবেশ করার পর বন দপ্তর থেকে মাথা পিছু ১৫০ টাকা দিয়ে একটা টিকিট করাতে হয় এবং এই টিকিটের সময়সীমা তিনদিন থাকে

হিন্দুদের মতে দেবতা এখানে অবগাহন করেছেন বলে তার এইরূপ নাম হয়েছে একে আবার অনেকে ইন্দ্রসরোবরও বলে থাকেন তবে এখানকার সাধারন লোকের বিশ্বাস যে যুধিষ্ঠিরের আদেশে ভীম এই সরোবর তৈরী করেন কারন পঞ্চপান্ডবের মধ্যে ভীমই ছিলেন সবথেকে বেশী শক্তিশালী এই জায়গার প্রকৃতি অপরূপ সুন্দর যখন হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গরাশির প্রতিবিম্ব এই জলে দেখা যায় তখন এই দৃশ্য যিনি উপভোগ করেন তিনি তা কোনোদিনই ভুলতে পারেননা  এখানে চারদিকে নীল আকাশ আর সবুজ গাছের ছড়াছড়ি তার সাথে উপরি পাওনা হলো বিভিন্ন পাখির কলতান পাখির কলতানে এখানে সবসময়ে মুখর হয়ে থাকে এখানকার সবুজ মাঠের গালিচায় গা টাকে এলিয়ে দিয়ে আকাশ আর তালের জলের পানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনটা যেন কোথাও হারিয়ে যাবার উপক্রম হয়ে পড়ে তারপর সবকিছুকে ফেলে দিয়ে আবার পিছন দিকে হাঁটা পথে সারি গ্রামে ফিরে আসা