পার্থময় চ্যাটার্জী

উত্তরবঙ্গ অনেকেই গেছেন, দেখেছেন দার্জিলিং, কালিম্পঙ, মিরিক, ডুয়ার্স। বাঙালি পর্যটকদের কাছে উত্তরবঙ্গ একটা খুবই প্রিয় ও পরিচিত জায়গা। আমার সাথে এই উত্তরবঙ্গের সম্পর্ক আজ প্রায় পঞ্চাশ বছরের। আমার ঠাকুরদাদা তার ডাক্তারি পেশার জীবন অতিবাহিত করেছিলেন কালিম্পঙের দুরপিন রোডে । গুরুদেবের সান্নিদ্ধ পেয়েছেন।আমার বাবা তার কর্মজীবনের বেশ ক্ষানিকটা সময় এই উত্তরবঙ্গের পাহাড়ের কোলে কাটিয়েছিলেন আর আমি বাবার হাত ধরে এই উত্তরবঙ্গকে চিনেছি এখন ছেলের পাশে বসে উত্তরবঙ্গকে জানছি। তবে উত্তরবঙ্গকে পুরোপুরি জানতে গেলে বেশ কয়েকটা জন্ম লাগবে। আমার চোখে উত্তরবঙ্গের দুটো ভাগ আছে, একটা ভাগ আধুনিক ও কৃত্রিম আর সাথে দেখা যায় অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা। যেখানে প্রকৃতি তার নিজস্ব রূপ হারাচ্ছে প্রতিদিন। আর এক উত্তরবঙ্গ  আছে প্রকৃতির কাছে, যেখানে পাবেন না কোনো আধুনিক চাকচিক্য, কৃত্রিমতা কি সেখানে তা জানা নেই। নেই কোনো হোটেল, নেই কোনো মল নেই কোনো অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা। তবে সেখানে আছে প্রত্যেকে প্রত্যেকের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা। আমার কাছে এই সাদাসিধা ও সারল্যে পূর্ণ উত্তরবঙ্গ খুব প্রিয়। পাহাড়, নদী, ঝর্ণা চা বাগান ও   জঙ্গল নিয়ে সাজানো উত্তরবঙ্গকে জানতে গেলে চলে আসুন কালিম্পঙ জেলার গরুবাথানে। প্রকৃতি তার নিবিড় স্পর্শে সাজিয়ে রেখেছে এই ছোট্ট জায়গাটিকে।  শীতের সময় খুব একটা ঠান্ডার দৌরাত্ব নেই আবার গরমের সময় গরম তেমন পাত্তা পায়না। বর্ষার সময় তো আমার মনে হয় স্বর্গের সৌন্দর্য্য ছেড়ে দেব দেবীরা সব চলে আসেন এই অপরূপ জায়গাটির আকর্ষণে।গরুবাথানের প্রাণ কেন্দ্র সোমবারে বাজার। যারা নিজেরা দুই বা চার চাকায় নিজে ড্রাইভ করে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন তাদের কাছে এই ডুয়ার্সের সমতল থেকে উঠে আসা লাভা রোড একটা স্বপ্নের  মতো গাড়ি চালাবার জায়গা। লাভা, লোলেগাঁও, রিশপ ও কোলাখাম পৌঁছানোর সহজ ও কাছের পথ। পুরো রাস্তাটাই গরুবাথান ব্লকের উপর দিয়ে গেছে। নেই কোনো খাড়াই পাহাড়, নেই কোনো পাহাড়ি  দুরন্ত বাঁক। এই পথেই পড়বে গরুবাথানের সব থেকে সুন্দর পিকনিক স্পট চেইল নদীর বুকে এই ছোট্ট পাহাড়ি ও বাহারি শহর।  এখানে থাকতে ইচ্ছে হলেও এতদিন এইখানে কোনো ভালো থাকার জায়গা এ খাবারের দোকান ছিলোনা। গত ১৭ই মার্চ এই সোমবারে বাজারে উদ্ঘাটন হলো একটি অসাধারণ হোমস্টে এখানে থাকা ও খাবার সহ একজনের খরচ পরে মাত্র ১১০০ টাকা। আর এরই লাগোয়া একটি চাইনিস ও  ইন্ডিয়ান রেটুরেন্ট আছে। এই সোমবারে বাজারে কেন পর্যটকরা থাকে জানেন! কারণ এখান থেকে যেতে পারবেন লাটাগুড়ি, গরুমারা, চাপড়ামারি, খুনিয়া ফরেস্ট গুলি। খুব ঠান্ডা বা খুব গরম নয় এই ছোট্ট পাহাড়ি জায়গাটি। আর পাবেন পাহাড়ের ভাজে ভাজে স্যাম সুন্দর সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম, যেমন কুমাই , প্যারেন দলগাঁও, ঝান্ডি , ফাফারখেতি , কুয়াপানি লালিগুরাস আর হাঁটা পথে পাবেন অপূর্ব ফাগুকে।     শিয়ালদাহ থেকে রাত্রের কাঞ্চনকন্যা ট্রেন চেপে নিউ মালবাজার স্টেশন নেমে সেখান থেকে প্রাইভেট গাড়িতে করে  চলে আসুন গরুবাথানের প্রাণ রূপের হাট সোমবারে বাজারে । গাড়ি ভাড়া ১৫০০ টাকা।আর থাকার জন্য অনেক হোমেসটায় আছে তবে খুব ভালো পরিবেশে ও সুন্দর জায়গায় নতুন ভাবে গড়ে উঠেছে অতিথি হোমস্টে । এখানে সব হোমস্টেতেই  থাকা ও খাওয়া বাবদ প্রতিজন প্রতিদিন খরচ পড়ে ১১০০ টাকা করে ।বর্ষায় পাহাড়ি নদী ও পাহাড়ি ঝর্ণা দেখতে চলে আসুন গরুবাথান সাথে পাবেন ডুয়ার্সের সবুজের সমারোহ।