The names of these two places in Jhalong-Bindu Dwars are pronounced almost simultaneously. When you hear Jhalong, it seems as if there is a ripple of water. Listening to ‘B’, it seems that Sindhudarshan is at the point. Along the way there is another place of interest ‘Paren’. The new cottage of the Forest Development Corporation has been launched in Paren a few days ago so the name of Paren can also be added in this circuit. The popularity of Jhalong has increased due to the Jaldhaka power project and with it the extraordinary nature of Dwars.


ঝালং-বিন্দু ডুয়ার্সের এই জায়গা দুটির নাম প্রায় এক সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। ঝালং’ শুনলেই যেন মনে হয় জলতরঙ্গের টুংটাং আর । ‘বি’ শুনলেই মনে হয় বিন্দুতে সিন্ধুদর্শন। এই পথেই রয়েছে আর এক দর্শনীয় স্থান ‘প্যারেন। প্যারেনে কিছুদিন আগেই চালু হয়ে গেছে বন উন্নয়ন নিগমের নতুন কটেজ তাই এই সার্কিটে প্যারেনের নাম ও যুক্ত করে নেওয়া যায়। জলঢাকা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই ঝালং-এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে আর তার সঙ্গে ডুয়ার্সের অসাধারণ প্রকৃতি তাে আছেই।

ট্রেনে নিউমাল তারপর স্টেশন থেকে বা একটু দূরে চালসা থেকে এই সফরের জন্য গাড়ি ভাড়া করাই সুবিধাজনক। বাস সার্ভিসও আছে শিলিগুড়ি থেকে। তবে দিনে মাত্র দুটি বাস যাচ্ছে শিলিগুড়ি থেকে ঝালং—লােকাল বাস যাচ্ছে শিলিগুড়ি থেকে ঝালং—লােকাল বাসে ভিড়ও হয় প্রচণ্ড ! তাই পকেটে একটু টান পড়লেও এ পথে গাড়িই ভাল। চালসা থেকে আমরা গাড়ি ভাড়া করেছি, একদিন ঝালং বাস করে চলে যাবে চাপড়মারি অভয়ারণ্যের অন্দরে। খুনিয়া মােড় থেকেই জঙ্গলের শুরু। রাস্তার দু-ধারে তাে বেশ ঘন জঙ্গলজন্তু-জানােয়ার রাস্তায় দেখতে পাওয়া যাবে কি? আমাদের ড্রাইভার তাপস এ পথে বেশ অভিজ্ঞ। তার। জবাব ‘প্রায়ই খুনিয়া মােড়ে হাতির উপদ্রব হয়। আর বন্যপ্রাণী প্রায়ই এ রাস্তা পারাপার করে। এ জঙ্গলে হাতি ছাড়াও রয়েছে গাউর, চিতা, বুনাে শুয়াের, হরিণ, ময়ুর আর পাখির তাে শেষ নেই।

চাপড়ামারি অভয়ারণ্যের বাের্ড বাঁ-দিকে ফেলে আমরা এগিয়ে চলি। পথ কিন্তু একেবারে নিরালা। রাস্তার ধারে বসতিও নেই, পথে নেই আর কোন যানবাহন। আস্তে আস্তে জঙ্গল হালকা হয়ে আসে চোখে পড়ে দু-একটা বসতি। ড্রাইভার জানায় এগুলি সব গােখা বস্তি। চাপড়ামারি থকে দশ কিমি পথ পেরােলে জলপাইগুড়ি জেলা শেষ, শুরু দার্জিলিং জেলা। দু-একটা চা বাগান চোখে পড়ছে। রাস্তার ধারে চিলােনি ওদাল গাছের জঙ্গল, রয়েছে কোবরাজ গাছ—এ গাছ নাকি খুব মূল্যবান। জঙ্গলের মাঝে মাঝেই সিনকোনার প্ল্যানটেশন সঙ্গে রয়েছে বড় এলাচ, আমলকি আর বাঁশ গাছও। বাঁশ গাছে আবার ফুলও ফল ধরেছে। যাই হােক প্ল্যানটেশন চেকপােস্ট হয়ে পেরিয়ে চলি নকশাল ঝােরা—এই ঝােরাই পরে মিশেছে জলঢাকা নদীতে। এখানে ও রয়েছে সিনকোনা প্ল্যানটেশনের সঙ্গে ডায়াসকোরিয়া ইপিকাক ইত্যাদি ভেষজ চাষ আর রয়েছে রবারের প্ল্যানটেশনও।।

কুমাইটি এস্টেটের পর থেকেই ঘাট শুরু অর্থাৎ এবারে আমরা পাহাড় চড়তে শুরু করছি। রাস্তার ধারে বুনাে কঁঠালের গাছ দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ-ছাড়া ভুট্টার ক্ষেত, রবারের প্ল্যানটেশন। আঁকাবাঁকা পথে গাড়ি উঠতে উঠতে থামল এক ভিউপয়েন্টের কাছে। এখান থেকে জলঢাকা নদীর গতিপথ খুব সুন্দর দেখা যায়। এটাই পাহাড়চূড়ার ভিউ পয়েন্টই গৈরিবাস এলাকার সর্বোচ্চ বিন্দু উচ্চতা ১৯০০ ফুট। গেরিবাস থেকে দেখা যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অনেক নিচে ঝালং শহর। ঝালং যেন সবুজের সমারােহে উজ্জ্বল তাকে ঘিরে রেখেছে পাহাড়ি নদী ঝলুং। জলঢাকার ওপারেই ভুটান পাহাড়—সেখানকার বাড়িঘর, বৌদ্ধমন্দির, পতাকার সারি সবই ভিউপয়েন্ট থেকে পরিষ্কার দেখা যায়।।

গৈরিবাস-বিন্দু রােড ধরে আরও পাঁচ কিমি ঢালু পথে এগিয়ে গাড়ি পৌঁছল ঝালং। শহরে ঢােকার মুখেই পুলিশ চেকপােস্ট। চেকপােস্ট পেরিয়ে বাঁ-দিকে ঝােলুং ঝােরা বিশাল বিশাল বােল্ডারের মধ্যে দিয়ে জলতরঙ্গে মূছ তুলে বয়ে যাচ্ছে। ঝােরার একেবারে ঘা-ঘেঁষেই ঝালং বনবাংলাে। সেখানেই আমাদের একদিনের রাত্রিবাস। পাহাড়ের কোলে এই বাংলা বড়ই সুন্দর।বনবাং লাে ঘিরে রয়েছে সবুজ লন সেখানে মরশুমী ফুলের বাহার। ঘরের জানাল দিয়েই দেখা যায় ঠিক নিচেই বয়ে চলেছে পাথরের মধ্যে দিয়ে ঝলুং ঝােরা। মালপত্র নামিয়ে চা খেতে খেতে কেয়ারটেকারের কাছে সুনতে থাকি ঝালং-এর ইতিবৃত্ত।

জলঢাকা নদীর উপত্যকায় এক ছােট্ট পাহাড়ি গ্রাম ঝালং। এক সময়ে ছিল গভীর জঙ্গলে ঢাকা এক উপত্যকা। ভারত-ভুটান সীমান্ত বলে এর একমাত্র উল্লেখ ছিল। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় জলঢাকা নদীর জলপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ তৈরি করার প্রস্তাব হয় ১৯৫৫ সালে শিলান্যাস হলেও ১৯৬৭ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর সঙ্গে আরম্ভ হয় ঝালং-বিন্দুর গভীর জঙ্গল থেকে শহর-গ্রামে রূপান্তর। জলঢাকা উপত্যকায় এই পথে উচ্চতম পয়েন্ট গৈরিবাস (১৯০০ ফুট) আর ঝালং-এর উচ্চতা ১২০০ ফুট চা খেয়েই আবার আমরা গাড়িতে গন্তব্য ১৪ কিমি দূরে বিন্দু পথে ছুঁয়ে যাব প্যারেনও। ঝলুং ঝােরার ওপর সেতু পেরিয়ে গাড়ি আবার ছুটল। আরও পাঁচ কিমি পরে রাস্তা দু-ভাগে ভাগ হয়ে গেছে—সােজা পথ চলে গেছে বিন্দু আর বাঁ-দিকের পথ প্যারেন গ্রামের দিকে। মােড় থেকে যতই আমরা প্যারেনের দিকে এগােচ্ছি রাস্তা ততই খাড়া হচ্ছে। সবুজ প্রকৃতিকে ঘিরে এক অনাবিল শান্তির নীড়র এই প্যারেন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভ্রমণের প্রাণকেন্দ্র এই প্যারেন। ২০০০ ফুট উচ্চতায় ফুল, নানান। 

ভেষজ গাছপালা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। চারদিকে কমলালেবুর বাগান। নিরালায় শহরের দূষণ থেকে দূরে কয়েকটা দিন কাটানাের জন্য বনদফতরের ইকো ট্যুরিজম সেন্টার রয়েছে। এখানে বিদ্যুৎও আছে। পাহাড়, জঙ্গলের অপরূপ দৃশ্য ও নির্জনতায় অবসর কাটানাের জন্য প্যারেন যেন পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানায়। তবে এভাবে প্যারেনে বেশিক্ষণ সময় কাটানাের অবকাশ মিলল না, ফিরে চলি আবার বিন্দুর পথে। ড্রাইভারের মুখে শুনি প্যারেন ছাড়িয়ে পথ এগিয়ে গিয়েছে ফুলের উপত্যকা তােদে-তাংতার দিকে। এগুলি সম্ভাবনাময় পর্যটনস্থল তবে যােগাযােগ ভরসাতেই যেতে হবে রাস্তার ধারে কমলাবাগান দেখতে দেখতে চলেছি ঝালং-বিন্দু এলাকায় কমলালেবুর খুব খ্যাতি আছে। নভেম্বর মাস থেকে ঝালংএর কমলা বাজার ছেয়ে ফেলে ফেলে।

ঝালং-বিন্দু রােড শেষ হয়েছে বিন্দুতে। জলঢাকা নদীর ধারে ছােট্ট জনপদ বিন্দু। জলঢাকা নদীর ওপর রয়েছে এক ব্যারেজ। ভুটান থেকে নেমে আসা বিন্দু নদীর জলস্রোতকে কাজে লাগিয়ে প্রধান টারবাইন চালানাে হয় এখানে। গাড়ি পার্ক করা হল নদীর ধারে। নদীর বুকে বড় বড় বােল্ডার তার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে স্রোতস্বিনী জলঢাকা। বােল্ডারের কোণে কোণে অনেক পিকনিক পার্টি বসে পড়েছে। সামনে উঁচু লক গেট, তার গা বেয়ে নামছে জলের অঝাের ধারা। ব্যারেজের শীর্ষে ভিউপয়েন্ট, রাস্তা দিয়ে ভুটানের প্রবেশদ্বার। সিঁড়ি বেয়ে এখন আমরা ব্যারেজের শীর্ষে। ওপর থেকে দেখা যায় একদিকে বিন্দুর রূপ আর অপর দিকে ভুটানের শুরু।নদীর গা বেয়ে সবুজ পাহাড়, দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গ্রাম। আর ব্যারেজ পেরিয়ে ভুটানে অর্থাৎ বিদেশ প্রবেশ করতেও কোন বােধা নিষেধ নেই। বাঁধের উপরে রেলিং ঘেরা চওড়া রাস্তা পেরিয়ে ভুটানে প্রবেশ। উর্দিপরা ভুটানি পুলিশ কিছু বলে না, আমরা হাঁটতে থাকি ভুটানের মাটিতে। প্রথমেই চোখে পড়ে লকগেটের শাসনে তৈরি হয়েছে এক সুন্দর লেকের। নি-চু, উচু আর বিন্দু-চু এই তিন নদীর মিলিত প্রবাহ পড়ছে জলঢাকার। আর তার গতি ও জলের স্রোতকে কাজে লাগিয়েই এই হাইডেল প্রজেক্ট। ভুটানের এই পথে মিনিট পনেরাে হাঁটলে পৌঁছে যাওয়া যাবে নদীর ধারে পিকনিক স্পটে। অনেকেই মাছ ধরতে চলে আসে এখানে। সীমান্তে ঘােড়া মজুদ আছে। ঘােড়া ভাড়া করে ঘুরে আসা যায় আরও একটু দুরে ভুটানের পাহাড়ের অন্দরে।

ফিরে আসি আবার জলঢাকার তীরে। তার পর বিন্দু বাসস্ট্যান্ডের কাছে। এখানে বিন্দুর একমাত্র নামী হােটেল শিবাজী ইন। শিবাজী হােটেল থেকে জলঢাকার সফেন জলধারার রূপ দেখতে পাওয়া যায়। ছােট্ট গ্রাম বিন্দু রয়েছে একটি মন্দির। সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার এখানে হাট বসে। ভুটানবাসীরাও এই হাটে কেনা-বেচায় আসে। এই সীমান্ত দিয়েই আদান-প্রদান হয় নিত্য ব্যবহার্য পণ্য। দু-দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বলেই বােধহয় সীমান্তে সে রকম কড়াকড়ি নেই। এবার ঝালং-এর দিকে ফেরার পথ ধরি। দুপুরে ঝালং-এর বাংলােয় মধ্যাহ্নভােজ সেরে সামান্য বিশ্রাম নিয়েই বেরিয়ে পড়ি ঝালং-এর রূপ অন্বেষণে।

ডুয়ার্সের এক অপরূপ সুন্দরী অথচ অল্প পরিচিতা এই ঝালং। ঝলুং ঝােরার বুকে পাথর খণ্ডগুলি যেন এক একটি পাহাড় তার পাশ দিয়ে সফেন জলধারা যখন নাচতে নাচতে যায়, তখন মনটাও যেন উদ্দামতায় নেচে ওঠে। এই ঝলুং ঝােরা একটু এগিয়ে মিলিত হয়েছে জলঢাকা নদীর সঙ্গে। নেমে পড়ি ঝালং-এর রাস্তায়—খুবই ছােট গঞ্জবাড়িঘর দোকানপাট কিছু রয়েছে। বৌদ্ধমন্দির পেরিয়ে প্রধান বাজার অঞ্চল তাও কিছুটা জমজমাট। জলঢাকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি ঝালং-এ অবস্থিত—অনুমতি নিয়ে দেখে আসা যায়। ঝালং-এর বাসিন্দারা অধিকাংশই হাইডেল প্রজেকেক্টর কাজের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া রয়েছে সামান্য চাষবাস বিশেষত কমলার চাষ এখানে খুব ভাল হয়।।

শান্ত উন্মুক্ত প্রকৃতি, অপার নির্জনতায় কমলার গাছে ঘেরা ঝালং-এর দুটো দিন কাটালে মনে যেন কালিমামুক্ত হয়ে যায়। অবসর যাপনের আদর্শ এই ঝালং-বিন্দু—এখানে ৫ পয়েন্ট, ৭ পয়েন্ট সাইট সিইংর বাধ্যবাধকতা নেই—এখানে প্রকৃতির সঙ্গে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। রাতে বেশ ঠাণ্ডা পড়ে ঝালং-এ। স্থানীয়রা বলে নাথুলা হাওয়া। এমনিতেই শান্ত এ স্থান রাতে যেন হয়ে ওঠে নৈঃশব্দের প্রতীক।

প্রয়ােজনীয় তথ্য শিলিগুড়ি থেকে গাড়িতে সরাসরি ঝালং পৌঁছান সবচেয়ে সুবিধাজনক। শিলিগুড়ি থেকে ঝালং-এর বাস দিনে দুটি আছে। তবে সে বাসে বেশ ভিড় হয়। চালসা থেকে গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার জিপে ঝালং যাওয়া যায়। লাটাগুড়ি থেকেও গাড়ি ভাড়া করে দিনে দিনে ঝালং বিন্দু প্যারেন ঘুরে আসা যায়। লাটাগুড়ি থেকে বিন্দু ৭০ কিমি। পথ গেছে মূর্তি খুনিয়ামােড়, চাপড়ামারি, কুমাই, গৈরিবাস হয়ে।

আশিষ কুমার ঘােষ