Having traveled to almost all the states of India, I finally decided to go to unseen Gujarat, the huge state of Gujarat has a lot to look forward to. Such as historical circuit, religious circuit, landscape circuit, etc.
ভারতের প্রায় সবকটি রাজ্য পরিভ্রমণ করে, শেষে আমার অদেখা গুজরাট যাব বলে মনস্থ করেছিলাম, বিশাল রাজ্য গুজরাট দ্রষ্টব্য বহু কিছুই আছে। যেমন ঐতিহাসিক সার্কিট, ধর্মীয় সার্কিট, প্রাকৃতিক দৃশ্য সার্কিট, ইত্যাদি।
আমরা ছয়জনের দল সােমনাথ তীর্থক্ষেত্র পৌছলাম। মন্দিরের কাছেই হােটেল ‘শিবহরি’তে উঠলাম। পরদিন ভােরে হােটেলের ছাদে উঠে প্রভাতের নরম রােদে সােমনাথের মন্দির দেখতে পেলাম। দেখেই মন ভরে গেল। মন্দিরের ইতিহাস পড়লে জানা যায় যে এটি প্রায় ৩২০ থেকে ৫০০ অব্দে বানানাে হয়েছিল। এটি একদম আরব সাগরের ধার ঘেঁষে। সােনা, মণি-মানিক্যের লােভে এই মন্দির বহিরাগত শত্রুরা আক্রমণ ও লুণ্ঠন করেছিল। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, এর গঠনগত ও পরিবেশগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল-এর দৌলতে এই মন্দিরের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। প্রত্যেক বছর, হিন্দু পঞ্জিকা মতানুসারে কার্তিক ওধ’ বা শিবের সন্তান কার্তিকের জন্ম তিথিতে চারদিন ব্যাপি মেলা বসে এই সােমনাথ মন্দির প্রাঙ্গণে। তখন গুজরাটের বহু স্থান থেকে ভক্তরা এসে এই পবিত্র স্থানে মিলিত হয়। ভাের ছ'টা থেকে রাত্রি ৯.৩০ পর্যন্ত মন্দিরের দরজা সর্বসাধারণের জন্য খােলা থাকে দিনে তিনবার আরতি হয়। সকাল ৭টায়, দুপুর ১২টায় ও সন্ধ্যে ৭টায়। আমরা সােমনাথ পেঁৗছে, হােটেল ঠিক করে, শেষে প্রায় পৌনে দশটায় ফাকা মন্দিরে প্রবেশ করেছিলাম।
পরদিন সকাল ৯টায় যখন পূনর্বার দর্শন করতে যাই, তখন বিরাট লাইন দর্শনার্থীদের। জুতাে, ক্যামেরা, চামড়াজাত জিনিস রাখার তাড়াহুড়াে, কেউ পকেটে মােবাইল নিয়ে প্রবেশ করছে কি না তার কড়া পাহাড়া। মন্দিরের ভেতরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা। তবে সাবধান, শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালার কোনও সম্ভাবনা নেই। গর্ভগৃহের মধ্যে প্রবেশ করার কোনও উপায় নেই। ঘরের বাইরে স্টিলের ব্যারিকেডের মধ্যে দাঁড়িয়ে ক্ষণিক দর্শন। বেশীক্ষণ সামনে দাঁড়ানাে চলবে না। সামনে চ্যানেল করা আছে, সেখানেই গঙ্গাজল ঢালতে হবে। মন্দিরের পশ্চাতে দীর্ঘ পরিসরের সুরম্য বাগান। দূরে তার সীমানা প্রাচীর। আর আরব সাগরের ঢেউ তার গায়ে আছড়ে পড়ছে। মন্দিরের অবস্থানগত সৌন্দর্য সকলকে বিমােহিত করে। সােমনাথের শিবদর্শন সাঙ্গ করে, এক ট্র্যাভেলস-এর বাস ধরে পরদিন সকাল ঠিক ৯টায় দ্বারকা বা দোয়ারকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। সময় লাগবে ৫ ঘণ্টা। ঠিক সময়ে বাস ছাড়ল। পােরবন্দর হয়ে দ্বারকা পৌছবে। রাস্তা চলেছে সমুদ্রের পাশ বরাবর। মাঝে মধ্যেই দেখা যায় দূরে দূরে সােলার পাওয়ার উৎপাদনকারী ১৫০ ফিট উঁচু টাওয়ারের উপর তিনটে ব্লেডওয়ালা পাখা ঘুরছে। রাস্তা এতটাই মসৃণ যে বাসে বসে কোনও ঝাকুনি লাগছিল না। রাস্তাটা কিছুটা গেছে। সমুদ্রের খুব পাড় ঘেঁসে। বাস থেকেই সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়তে দেখা যায়। এ এক মনােরম অভিজ্ঞতা। রাস্তায় একটা ছােট মন্দির-এর সামনে এসে বাস দাঁড়াল। ১০ মিনিটের জন্য। তারপর আবার যাত্রা। পােরবন্দর শহর অতিক্রম করে, শেষে অনেকটা ধূধূ প্রান্তর অতিক্রম করে ২টো নাগাদ দ্বারকায় পৌছাল।
দ্বারকায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবস্থান করতেন। মন্দিরে তারই মূর্তি। কারুকার্যমন্ডিত প্রস্তর নির্মিত মন্দির। চারিদিক থেকে রঙিন আলাে রাত্রিবেলায় মন্দির আলােকিত করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার দর্শনার্থীর ভিড়। তবে সােমনাথের মন্দিরের মতন প্রহরী নেই। তবে নিয়মকানুন আছে। ভিতরে ছবি তােলা ও চামড়াজাত দ্রব্য পরিত্যাজ্য। শুনলাম কৃষ্ণের মূর্তি নাকি স্বয়ম্ভু। কুচকুচে কালাে পাথরের হাত চারেকের মূর্তি। স্বর্ণ মুকুট ও স্বর্ণহার পরিধানে। শয়ে শয়ে ভক্ত, লাইন দিয়ে দর্শন করছে। দুপুর ১টার পর মন্দির বন্ধ হয়। বিশাল মন্দির চত্ত্বরে তখন একজন লােকও থাকে না। আবার ৪টেয় মন্দির খােলে। তখন আবার লােকে লােকারণ্য। চারিপাশে গরু ও ষাঁড়ের আনাগােনা। মন্দিরের পেছনেই গােমতী নদী। সুন্দর পরিষ্কার বাঁধানাে নদীর এক সিমানা সরাসরি আরব সাগরের জলে গিয়ে মিশেছে। প্রাকৃতিক নিয়মানুসারে দিনে দু’বার জোয়ার আসে। তখন নদীর অন্যরূপ আবার ভাটার সময়ে নদী অর্ধেক শুষ্ক হয়ে যায়। আমরা গােমতী নদীতে অবগাহন করেছিলাম। সমুদ্রের পাড় খানিকটা বাঁধানাে। ও পাশে, ছােট্ট স্থানে শবদেহ জ্বালান হচ্ছে। চারদিক ঘিরে রাখা আছে। দূরে দেখা যায় এক আলােকবর্তিকা। দ্বারকার আরব সাগরে দেখলাম দীঘা বা পুরীর মতন ঢেউ নেই। প্রায় নিস্তরঙ্গ সমুদ্র। আর মুষ্টিমেয় লােকসংখ্যা। বেশীরভাগই ট্যুরিস্ট। সম্পূর্ণ গুজরাট হল নিরামিশাষী।
দ্বারকা থেকে আমরা ‘ভেট দ্বারকায় গেছিলাম। কৃষ্ণ, ভারতভূমি ছেড়ে, তার কিছু অনুগামীদের নিয়ে দ্বারকা ছেড়ে, নৌ করে, আরবসাগরের বুকে ভেসে, নিকটস্থ এক দ্বীপে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখানেই তিনি অবস্থান করেন। সেই দ্বীপেই, ভেট দ্বারকা অবস্থিত। ওখানেই মন্দির, আর তার মধ্যেই কৃষ্ণের মূর্তি আছে। যেতে গেলে, কোন ট্র্যাভেলস-এর সাথে যাওয়াই ভাল। এছাড়া ভাড়া গাড়িতেও যাওয়া যায়। সারা গুজরাটে রাস্তাঘাট সুন্দর ও মসৃণ হওয়াতে কোনও অসুবিধাই হয়নি। ট্র্যাভেলস-এর বাসে দিনে দুইবার যাওয়ার রীতি। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত, একটা ট্রিপ। আবার ২টো থেকে সন্ধ্যে সাতটার সময় পর্যন্ত অপর ট্রিপ। আমরা দুপুরের ট্রিপে গিয়েছিলাম। প্রথমে ওরা ৩ কিমি দূরে রুক্ষ্মিনী মাতার মন্দির দেখায়। তারপর ওরা নিয়ে মায় ‘গােপী তালাও’ নামক স্থানে। ওখানে এক সরােবরে বিখ্যাত গােপীদের নিয়ে কৃষ্ণ তার স্নান অধ্যায় করেছিলেন। এরপর ছােট হরসিদ্ধির’ মন্দির-এ বাস দাঁড়ায়। স্থানটা অসাধারণ, দিকচক্রবাল পর্যন্ত বিস্তৃত জলরাশি। বাঁধানাে ঘাট। এরপর ‘ওখা’ নামক সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে গিয়ে বাস দাঁড়াল। এখানেই যাত্রা বিরতির বাস-এর। কারণ এরপর সকলকে আরবসাগরের জলে নৌকা করে পাড়ি দিতে হবে।‘ভেট দ্বারকা’ দ্বীপে। আধঘণ্টার সফর। স্থীর সমুদ্রে সী-গাল পাখীদের আনাগােনা। সারি সারি রঙিন নৌকা। অগুনতি দর্শনার্থী। নৌকা পাড়ে লাগাতেই, পিল পিল করে যাত্রীরা নৌকায় ওঠে। ভর্তি হলেই নৌকা ছাড়ে। জনপ্রতি ১০টাকা ভাড়া। মনােরম নৌকাযাত্রা শেষে ভেট দ্বারকায় উপস্থিত হলাম। জেটি ধরে ১০ মিনিট হেঁটে মন্দিরে পৌছালাম। ক্যামেরা, মােবাইল, জুতাে ১০টাকার বিনিময়ে জমা রেখে টোকেন নিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করলাম। ঋকি দর্শন বলতে যা বােঝায় তাই। সময়াভাবে সমগ্র স্থান পরিভ্রমণ করা গেল না। কারণ ওখার উদ্দেশ্যে শেষ লঞ্চ ছাড়বে ৫.৩০-এ। ফিরে আসার বাসে চাপলাম নৌকার ভাড়া মিটিয়ে। বিখ্যাত টাটা কোম্পানির নুন প্রস্তুত-এর কারখানার পাশ দিয়ে গিয়ে দ্বারকায় পৌছলাম ৭.১৫তে। ‘তেপান্তরের মাঠ’ ছােটবেলায় বইতে পড়েছিলাম। কিন্তু গুজরাট ভ্রমণে এসে তা যে কি বস্তু তা জীবনে প্রথম দেখতে পেলাম।
অভিজিৎ ঘােষ
0 Comments