The song of breaking the constant waves. Under the infinite blue sky, there is a rush of water. Coast of white sand. In solitude. Two bars rest. A swarm of seagulls descending from the sky in search of fish in the sea. Gaepalpur on Sea is a hotbed of sea bathing and sunrise and sunset.



নিরন্তর ঢেউ ভাঙার গান। অসীম নীল আকাশের নীচে উদ্দাম জলরাশির আছাড় পাছাড়। সাদা বালুকাভূমির তটরেখা। নির্জনে। দু’দণ্ড বিশ্রাম। আকাশ থেকে নেমে আসা এক ঝক শঙ্খচিল সমুদ্র জলে মিশে থাকা মাছেদের সন্ধানে। সমুদ্র স্নান ও সূর্যোদয়সূর্যাস্তের অকৃত্রিম সৌন্দর্যের আকরভূমি হল গােপালপুর অন সি।

সে অনেক দিনের আগের কথা। গােপালপুর ছিল তখন জেলেদের অনাড়ম্বর এক গ্রাম। নাম ছিল পালােরা। তারপর আঠারাে শতকে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় গােপালজীর মন্দির। অপূর্ব গঠনশৈলী মন্দিরটির। ক্রমে বহু লােক এখানে আসতে থাকে। লােকমুখে জেলেদের গ্রামের নাম হল গােপালপুর। গােপালজীর মন্দিরের সন্ধ্যারতি মনকে চমৎকার করে। দেবতা খুবই জাগ্রত। ভক্তিভরে প্রণাম করতে ইচ্ছে করে। আমাদের টিমের রূপা মামীর গােপালজীর সম্পর্কে গভীর আগ্রহ। এখানে যে ক’দিন আমরা ছিলাম, একান্ত তারই আগ্রহে প্রতিদিন আমাদের সন্ধ্যারতি দর্শন হয়েছিল। অবশ্য, আমাদের থাকবার হােটেলটি মন্দির লাগােয়া। যাইহােক, একদা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী গােপালপুরকে সামুদ্রিক বন্দর হিসেবে ব্যবহার করত। সেই ভাঙা জেটি সামান্য কিছুদিন আগেও লােকে দেখেছে। আর কলিঙ্গ রাজাদের সময় এই বন্দর দিয়ে জাভা, সুমাত্রা ও বালি প্রভৃতি দেশে জলপথে বাণিজ্য চলত। বর্তমানে সমুদ্র সৈকতের পাশে রাজবাড়ির ভগ্ন ধ্বংসাবশেষ তার সাক্ষ্য বহন করছে।

আমাদের গােপালপুর পৌছনাের দিনেই বিকেলবেলা সমুদ্রস্নানের পর লাইট হাউস দর্শনের জন্য রওনা হলাম পায়ে হেঁটে। লাইট হাউসের ১৫৪টি সিঁড়ির ধাপ বেয়ে প্রায় ৯০ ফুট উচ্চতায় উঠে সমুদ্রের আর এক রূপ দেখা গেল। একদিকে সরে তার উল্টোদিকে ঢেউ খেলানাে বালিয়াড়ি। | গােপালপুরের বাজারটি ছােট। শাক সবজির কয়েকটি দোকান, আছে সামুদ্রিক মাছের ভিড়। এটাই স্বাভাবিক। যেহেতু, গােপালপুর অন্ধ্রপ্রদেশের একদম সীমান্তে। সেজন্য খাবার দাবার ও কথাবার্তায় ওই প্রদেশের প্রভাব। টিফিনের খাবার বলতে লুচিতরকারি কিংবা ইডলি-ধােসা। লাঞ্চ ডিনারে হরেক তরকারির সঙ্গে সম্বর ও পকোড়া অবশ্যই থাকে। থাকে স্যাল রাত্রের দিকে রুটি তড়কা পাওয়া যায়। আর আছে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের নানানপদ। কোন কোন হােটেলে মুরগীর মাংসও পাওয়া যায়।। | প্রথমদিন রাত্রেই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম কোথায় কোথায় সাইট সিয়িং করব। একটা বড় গাড়ি, আমাদের এগারােজনকে নিয়ে যাবে। দু’দিনের জন্য বুকিং। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। আর্যাপল্লী সমুদ্রসৈকত, তারাতারিণী মন্দির, টাস্পারা লেক, কালভৈরবী মন্দির, ধবলেশ্বর মন্দির, গােল্ডেন সী-বিচ ও পাতি সােনাপুর সী-বিচ। প্রভৃতি আমাদের দ্রষ্টব্য তালিকায় থাকছে। গােপালপুর থেকে মাত্র ১৬ কিলােমিটার দুরে ও বেরহামপুর থেকে ৩০ কিমি দূরে এবং ছত্রপুর থেকে মাত্র ৬ কিমি দূরে জেলেদের গ্রাম আর্যাপল্লী। বেশ কয়েকঘর জেলেদের বাস। ধূ-ধূ বালির উপর ছােট্ট গ্রাম। এদের এখানে বয়ে যাওয়া ঝড়ের তাণ্ডবের চিহ্ন রয়েছে। যত্রতত্র সামুদ্রিক মাছ শুকানাে হচ্ছে। আর সুন্দর জলবায়ুর মাঝে আর্যাপল্লী সী বিচ। এক একটা বড় বালিয়াড়ি সমুদ্রজলের তলায় যেন নেমে গেছে। চারপাশে ছড়ানাে ছিটানাে সবুজ ঝাউগাছের সারি। মাঝে মাঝে দেখা যায় সামুদ্রিক ঝড়ে উল্টে যাওয়া ঝাউগাছের শেকড়। শুকনাে গাছ শিকড়ের অপরূপ ভাস্কর্য।

গােপালপুর থেকে জাতীয় সড়ক ধরে বরাবর উত্তর-পূর্বে ১৬ থেকে ১৮ কিমি দূরত্বে অবস্থিত বিখ্যাত টাম্পারা লেক। এ পথ যাত্রায় জাতীয় সড়কের উভয় পার্শ্বের প্রাকৃতিক শােভা অবশ্যই দর্শনীয়। পথের উভয় পাশের সামান্যদুরে বড় বড় বালিয়াড়ি। মাঝে মাঝে কাজুবাদামের ও কেয়াগাছের বাগান। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আমরা কাজু ও কেয়া গাছের প্রচুর ফুল দেখেছি। কাজু গাছের ফুলে ফুলে তার রূপ আর কেয়াগাছের সাদাটে ফুলের সুগন্ধ পরিবেশকে মাতাল করে রেখেছে। আমরা রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে, সামান্য দূরে গিয়ে ছুঁয়ে দেখেছি। যাই হােক টাম্পারা লেকটি আকৃতিতে লম্বাটে ও এর জল স্বচ্ছ নীল। নৌকা বিহারের সুন্দর ব্যবস্থা রয়েছে। জনপ্রতি এক ঘণ্টায় ভাড়া ১০০ টাকা। প্রতিটি বােটে ৪জনের ব্যবস্থা। লেকটির জল মিঠা। এক প্রাইভেট এজেন্সি এর পরিচালনার দায়িত্বে আছে। লেকের পাড়ে হরেক কিসিমের মরসুমী ফুল। এদিকে দোকানপাট নেই বললেই চলে। আমরা এখানকার সিমেন্টের ছাতার তলায় বসে জিরিয়ে নিলাম অনেকক্ষণ। লেকটির বিপরীত দিকে কেয়া গাছের জঙ্গল, সাদা সাদা কেয়াফুল ফুটে রয়েছে দেখলাম। লােকমুখে শুনলাম এক একটি কেয়াফুলের দাম নাকি ২০ টাকা। এখান থেকে আমরা। গেলাম গােল্ডেন সী বিচ। উঁচু উঁচু বালিয়াড়ির পাশে সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতের উপর কিছুটা হেঁটে গেলে ভগ্ন জেটি দেখা যায়। ধবলেশ্বর মন্দিরের পাশ দিয়ে গােল্ডেন সী বিচ। প্রাচীন মন্দিরে জাগ্রত দেবতা। প্রাণমন ভরে নমস্কার করা হল।

দুপুরের দিকে আমরা পৌছলাম তারাতারিনী মন্দির দর্শনে। পুরুষােত্তমপুর গ্রামের পাশে ঋষিকুল্যা নদী তীরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে এক পাহাড়ের চূড়ায় মন্দিরটির অবস্থান। পাহাড়ের উপরে মন্দির দর্শনের জন্য ঘেরাটোপের রােপওয়ে আছে। ভাড়া লাগে মাত্র ৪০ টাকা। এছাড়া সিঁড়ি বেয়ে উপরে হেঁটে যাওয়া যায়। ৯৯৯টি সিঁড়ি। আমরা কয়েকজন সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম। বাপরে হাঁপ ধরে যায়। | তারাতারিনী মন্দিরে জোড়া দেবীর মন্দির। খুবই জাগ্রত দেবী। পাহাড়ের উপরে অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য। ইতি উতি বড় বড় আম, কাঁঠাল ও বট গাছ। আম কাঠালের গাছে মুকুলও এসে গিয়েছে। মন্দিরের সামনে মানত বটবৃক্ষ। সিমেন্টের বেদি করা। গাছটির প্রতিটি ডালে রঙীন বস্ত্রের ডােরা লােকে পূজো দেবার পরে মানত করে এখানে ডাের বেঁধে দিয়ে যায়। গাছটির সবুজ পাতা রঙীন কাপড়ের ডােরে আড়াল হয়ে যায়। | পরদিন গাড়িতে আমরা গেলাম গােপালপুর থেকে ৩২ কিমি দূরে কালভৈরবী মন্দির। মন্দিরের চত্ত্বর বিশাল এলাকাজুড়ে। আমাদের কলকাতার কালীঘাটের মায়ের মন্দিরে যেমন লােকসমাগম, এখানে অনেকটা সেরকম। চারপাশে মরসুমী ফুলের বাগান। মন্দিরটি খানিকটা কোনারকের মন্দিরের আদলে তৈরি। মন্দিরের গাত্রে ভাস্কর্য মূর্তি। নানারকম মিথুনমূর্তি রয়েছে। এখানেই রয়েছে ১০৮টি দেবতার মন্দির। একের পর এক দর্শন করতে হবে। আমরা সবকটি মন্দির দর্শনের পর, মন্দিরের ভােগঘরে অন্নভােগ আহার করি। সুস্বাদু ভােগ গ্রহণ করে ধন্য হলাম। এরপর, সবচেয়ে সুন্দর যে সমুদ্র সৈকতটি দেখলাম তা পাতি সােনাপুর সীবিচ। গােপালপুর থেকে প্রায় ৩৫কিমি দূরে এটি অবস্থিত। গােপালপুরের ঠিক দক্ষিণ দিকে অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যে এর অবস্থান। এমন জনশূন্য নির্জন সী-বিচ এর আগে দেখিনি। অসম্ভব সুন্দর সােনালী সী-বিচের একদিকে গভীর জঙ্গল। গা ছমছম করে। আমরা বাহুডা নদী পেরিয়ে জঙ্গলপথ ধরে পৌছে যাই বেলাভূমিতে। ওখানে মাছধরা জেলেদের ছাড়া কাউকে দেখিনি। বােধকরি সমুদ্র | প্রকৃতি তার রূপসৌন্দর্য্যের সমস্ত অবগুণ্ঠন উন্মােচনের জন্য এত নিরালা ও নির্জনতা পছন্দ করেন। বর্তমানে, বাহুডা নদীর উপর সেতু তৈরি হচ্ছে। কাজ সামান্নই বাকি। আগামী কয়েকবছরের মধ্যে ওখানেই গড়ে উঠবে অপূর্ব এক পর্যটন কেন্দ্র। সেদিন সমুদ্রের বেলাভূমির অন্য আর এক রূপ দেখলাম শেষ বিকেলে। পাশের জঙ্গল থেকে অন্ধকার ক্রমশ নেমে এল। একটু পরেই গােধূলি। জেলেরা মাছধরা ছােট ছােট নৌকাগুলি ভাসিয়ে চলেছে জাল ফেলতে ফেলতে। আকাশের সূর্যের গায়ে আবীর রঙ। সমুদ্রে সে রং ছড়িয়ে দিয়েছে। সমুদ্রের বেলাভূমিতে আমরা অন্ধকারের মধ্যে অস্পষ্ট সিট ছবি হচ্ছি। আমাদের রূপামামী মন্ত্রোচ্চারণ করে চলেছেন। 

প্রভাকর মাইতি