The road that is being pulled from Panagarh towards Ilambazar. Coughing in the sand. Ajay is looting. I crossed the bridge in the swing of autumn and came to Birbhum. The story is different. Road from Ilambazar to Belpur on the right. Twenty km. The car is running. Shall Mahua Sainajhuri's smell suddenly breaks. Bonvilla.
ভাদ্র ফুরােলাে বলে। উড়াে মেঘের ছবি কুনুরী নদী জলে। পানাগড় থেকে যে রাস্তা টানা যাচ্ছে ইলামবাজারের দিকে। বালিতে বালিতে কাশ হাসছে। অজয় লুটোচ্ছে শরতের দোলে সেতু পেরিয়ে এসে পড়লাম বীরভূমে। এ চলার গল্প অন্যরকমের। ইলামবাজার থেকে ডান হাতে বােলপুরের রাস্তা। কুড়ি কিমি। গাড়ি ছুটছে। শাল মহুয়া সােনাঝুরির গন্ধ মাখতে মাখতে হঠাৎ ব্রেক। বনভিলা। প্রবীরদা বলল, চলাে, এখানে থামি। সামনে মহাভারতের বয়স মাথায় নিয়ে বট। ঝুরিতে ঝুরিতে বাঁধা আমন্ত্রণলিপি। ভেতরে ঢুকতেই পাল সাহেবের আতিথ্য পেলাম। পালবাবু বরিশালের মানুষ। বেশ মিশুকে। রান্নায় পটু, ওই রান্নাঘর’ বেশ সুনামের সঙ্গে চালাচ্ছেন। আমাদের ঠাই দিলেন আম্রকুঞ্জের কুটিরে। চারপাশে গাছপালা। বেশিটাই আম আর পেয়ারা। তবে কাজুও আছে। ১৯৬৪ সাল থেকে এই ‘বনলক্ষ্মী’ গড়ে উঠেছে। পরিচালনায় ‘বনলক্ষ্মী উন্মেষ সমিতি’। আমরা হাঁটছি। পেছনে পেছনে আসছে সুখী বনহাঁসের দল। আকাশ ছায়ায় ডুবে। মেঘের প্রশ্রয়ে। কলকাতা থেকে মাত্র দু’শাে কিমি দূরে। কেমন যেন স্বপ্নমােড়া এ বনভিলার চৌহদ্দি। আমরা এখানে থামি না। চেনা মহলের ছুটিতে ছুটি বাহারি ছবির খোঁজে। হায় আনন্দ, আর কবে অচীন পাখির ভাষা চিনবি! দেখতে দেখতে বৃষ্টি এল। থরথর পাতাদের বাজনা শুনছি। প্রবীরদা মধু মণ্ডলের গল্প শুনছে। মধু মণ্ডল, এখানকার জনমজুর, ভাতচুক্তির বাঁধা জীবন। চালচুলাে সবই আছে মধুবাবুর। তবু এ জীবনেই তার সাধ। এ অরণ্য, এ বৃষ্টি, এই আশ্রম, অনন্দধামের আচ্ছাদন, এই বুঝি আসল সংসার।
নিশ্রুপ অন্ধকারে চোখ মেলে আম্রকুঞ্জের দাওয়ায় বসে আছি। দূর থেকে ভেসে আসছে তর্জা। শেয়ালকুকুরের। ব্যাঙ ডাকছে। তবে আকাশ উলঙ্গ তারার রূপকথায় হাবুডুবু। প্রবীরদা চোখ বুজে। হয়ত আশ্চর্য অরূপ ধুনে রঙ খুঁজছে। এই টুকরাে মুহূর্তের। এ পান্থপুরে এখন আমাদের অন্তরতম সখা বলতে নিচ্ছিদ্র তমসা। জ্যোর্তিময় একক নিশুতি। সুর আসছে, ঘুমের বিস্ময় বেঁধে।
বর্ষা জঙ্গল হারিয়ে যাচ্ছে। গাছপালা পশুপাখি আস্তে আস্তে অভিযােজনের লীলায় হারিয়ে ফেলছে অস্তিত্ব। অন্য অন্য অন্যতর জীবনের আচ্ছাদনে জেগে উঠছে আমাদের ভুবন জননী। এ পৃথিবী। আমাদের ধরিত্রীর আধুনিক অতীত। বনভিলা থেকে মাত্রই চার কিমি দুরে এই বিস্ময় জগৎ। পেছনে ইলাম বাজারে থেকে ১.৭ কিমি জঙ্গল ভেঙে গেলেই সেই আশ্চর্য রূপনগরী। কে জানে কোন টানে আমরা চলে এলাম এই গাঁয়ে। আমখই। কী অপূর্ব মিঠে নাম! সেই সঙ্গে শালের জামায় সভ্যতার আলাে ঝলমলে লালমাটির পথ। গাড়ি থামল একটা পুকুরের পাশে। একটা কেন, অনেক পুকুর, পাশাপাশি। একটা বড় পুকুরের মধ্যিখানে পাথরের বেদিতে রাখা প্রস্তরখন্ড। অন্যান্য পুকুরের পাড়ে ছােট বড় অনেক মাপের পাথর সাজানাে। এইসব পুকুর খুঁড়ে পাওয়া এ পাথর বৃত্তান্ত। এ আবিষ্কার সাম্প্রতিক। এগুলাে আসলে জীবাশ্ম, কাঠ জীবাশ্ম, এক কথায় গাছপাথর। একসময় ওই মায়ােসিন যুগের শেষ দিকে প্রকৃতির রাসায়নিক বিবর্তনে খনিজায়নের ফলে এ অঞ্চলের সুবিশাল বনাঞ্চল জীবাশ্মে পরিণত হয়। বীরভূম ছাড়াও বর্ধমান মেদিনীপুর আর উড়িষ্যায়র ময়ুরভঞ্জ অঞ্চলে এমন গাছ-পাথরের দেখা মেলে। চোখের সামনে যেন জাদুময়ার লীলা দেখছি। একটা পুকুরের পানা বেঁধে এক গ্রাম্য বউ কচি কাচাদের খেলায় মেতে। কিসের খেলা? হেসে কুটিপাটি সাঁওতাল রমণী জানায় মাছ মারার খেলা। সে মাছ শিকারও অন্য টানে বাঁধতে জানে। এক পা দু’পা করে চলে এলাম প্রশান্তির শীতল ছাউনিতে। বুড়াে সূর্য সাঁওতালের ছায়ায় বিশ্রাম প্রশান্তি। প্রশান্তির ছাতায় কাজলি মুর্মুর লাল চা-এ চুমুক দিতে দিতে আড্ডায় মজে গেলাম বিজয় মুর্মু শুকুল মুর্মুদের সঙ্গে। আড্ডার ফাকে ফাকে চোখ বােলালাম দেয়ালে আঁকা ছবিতে। অসংখ্য হস্তশিল্প আর পর আছে প্রশান্তি। এখানে কোনও পর্যটন আবাস নেই। তবে কাজলিদের আতিথ্য যে কেউ পেতে পারে যখন তখন। সে আপ্যায়নের মেটে জলসায় অবশ্যই সুপান্থ হতে হবে, ছাড়তে হবে শহুরে বাবুয়ানার পােশাক-আশাক। | বেলা এখন মাঝবয়সি। আমখই জুড়ে রােদুরের তুফানি বৈঠক। তবু তারই মধ্যে ছায়া পেতে কেমন মেজাজে জীবন লিখছে ওইসব সহজ পাঠের মানুষজন। চলে আসছি। বিজয় মুমু খাতা বাড়িয়ে বলল, কেমন লাগল, লিখে দিন। কলম বলল, আমখই, আমখই/আনন্দে থই থই, পা বাড়ালাম খরাে ভাদ্রর আগুনে।
আবার চলা পুরনাে পথের রেখায়। কাশ, কাশ, কাশের পাহাড়। কে সাজালাে গাে তােমাকে? এ অনন্ত আলােয় ? কোথাও উদ্বাহু মেঘ। কোথাও রােদুর ছুড়ে দিচ্ছে দুপুরের মাতলামি। চাদ্দিকে সবুজ শরৎ, মুখর চলায় চললাম। সামনে, আরও সামনে।
ঋতিক ঠাকুর
0 Comments