Our target this winter was Fleming. Every time I saw this giant migratory bird in white-pink color, I was fascinated and the desire to see it with my own eyes became more intense. They flock mainly to various wetlands along the west coast of India. One such obscure wetland is Vigayan in Maharashtra.
এবারের শীতে আমাদের লক্ষ ছিল ফ্লেমিংগাে। সাদা-গােলাপি রং-এর এই বিশালাকার পরিযায়ী পাখিটিকে যতবার ছবিতে দেখেছি ততবার মুগ্ধ হয়েছি আর স্বচক্ষে দেখবার বাসনা ততই তীব্র হয়েছে। মূলত ভারতের পশ্চিমতট বরাবর নানা জলাভূমিতে এরা ঝাঁক বেধে আসে। এমনি এক অখ্যাত জলাভূমি রয়েছে মহারাষ্ট্রের ভিগােয়ান’-এ।
যােগাযােগ হয়ে গেল স্থানীয় যুবক দত্ত নাগড়ের সাথে। বলে দিলাম আমাদের পৌঁছনাের তারিখ। আশ্বস্ত করল সে। নিশ্চিন্তে চলে আসতে বলল, কথামতাে ভিগােয়ান স্টেশন থেকে যখন ক্রান্তি ভিউ পয়েন্ট-এ পৌছলাম সাতসকালে, আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালাে দত্ত এবং তার ছেলেরা। দূরে চোখে পড়ল বিস্তীর্ণ জলাভূমি। অনন্ত বিস্তৃত। যতদূর চোখ যায় শুধু পাখির উড়ান। কোনওপ্রকার প্রাতরাশ সেরেই গাইড নিয়ে রওনা হলাম বােটিং-এর জন্য। ভীমা নদীর গতিপথ সভ্যতার কাছে বাধা পড়েছে উদনি ড্যামে। তারই ব্যাকওয়াটার এই ৩৯ কিমি দীর্ঘ জলাভূমি। জলে নৌকা ভাসতেই আমাদের চারপাশে উড়তে দেখলাম রিভার টার্ন, হুইস্কাৰ্ড টার্ণ, সিগাল, জলের পাড়ে বসে আছে গ্রে হেরন, উলি নেকড স্টর্ক... আরও অনেক জলের পাখি। আমাদের সকলের ক্যামেরা থেকেই ঘনঘন শাটারের শব্দ। কিন্তু গাইড আমাদের বলল, এইসব পাখির ছবি তােলার সময় অনেক পাওয়া যাবে।
তারচেয়ে আমরা বরং আগে ফ্লামিংগােদের খোঁজে যাই আরও কিছুক্ষণ জলে ভাসার পর হঠাৎ হঠাৎ গাইড আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করল যেদিকে সেদিকে তাকাতেই সেই অপূর্ব দৃশ্য চোখে পড়ল। গােলাপি সাদা রং-এর এক ঝাক ফ্লামিংগাে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে। সকালের মিঠে রােদে অবর্ণনীয় তাদের রূপ। কিছুক্ষণ ক্যামেরার শাটার টিপতেই ভুলে গেলাম। সম্বিত ফিরতেই মনের সুখে ছবি তুলতে শুরু করলাম। গাইডকে বারবার অনুরােধ করলাম নৌকাটিকে ফ্ল্যামিং গােদের আরও কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু তিনি রাজি নয়। কারণ হিসেবে বললেন এই লাজুক পাখিৰ দল একবার ভয় পেয়ে দূরে চলে গেলে হয়ত বেশ কিছুদিন এই অঞ্চলে আর ফিরবে না। অতীতে নাকি এমন ঘটনা ঘটেছে।
গররাজি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের পীড়াপীড়িতে বেশ খানিকটা কাছেই নিয়ে গেল আমাদের। ফ্ল্যামিংগােরাও আমাদের ক্যামেরারর সামনে বেশ কিছুক্ষণ নানা রূপে ছবি তােলার সুযােগ করে দিল। যতই কাছে গেলাম ততই মুগ্ধ হলাম এদের রূপবৈচিত্র্যে। এবারে মনােযােগ দিলাম অন্যান্য পাখিদের দিকে। চকচকে পাখনা নিয়ে তীরে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি গ্লসি আইবিস পালকে রােদ পড়ে সৃষ্টি হয়েছে অপূর্ব বর্ণমঞ্চরী। একটু এগােতেই দেখা পেলাম বেশ কয়েকটি ইউরেশিয়ান । পুনবিল। চামচের মতাে কালাে লম্বা ঠোট নিয়ে জলের মধ্যে খাবারের খোঁজ করে চলেছে। হঠাৎ দেখি মাথার ওপর দিয়ে তীব্র চিৎকার করে উড়ে গেল একঝাক বার-হেডেড গুস। গিয়ে বসল কিছুটা দূরে একটি চড়ার ওপর। সন্তর্পণে এগিয়ে বেশ কিছু ছবি তােলার সুযােগ পাওয়া গেল। এছাড়াও জলে ভাসতে ভাসতে দেখা পেলাম অগুনতি কমন কুট, ব্ল্যাক উইংড স্টিল্ট, কিংফিসার, গডউইট, স্যান্ডপাইপার, নর্দান শভেলার, কটন পিগমি গুস এবং আরও অনেক জলের পাখি।
কিছুক্ষণ পর গাইড একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে আমাদের বােট থেকে নামিয়ে কিছুটা হেঁটে যেতে বলল, একটু হেঁটে যেতেই চোখে পড়ল একঝাঁক রুডিশেল ডাক। অপূর্ব এদের গায়ের সােনালী রং। যখন এরা উড়ে যায়, সেই অনির্বচনীয় দৃশ্য ভাষায় বর্ণনা করা বুঝি সম্ভব নয়। সাথে বাড়তি পাওনা একজোড়া উলি-নেকড স্টর্ক। পরদিন সকালে আমাদের গাইড নিয়ে গেল অসপ্রে দেখাতে। সূর্যোদয়ের কিছু আগেই নৌকোতে উঠে পড়লাম। পাখির মেলার মধ্যে দিয়ে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চললাম। কিছুটা যাওয়ার পড়েই দূর থেকে চোখে পড়ল রাজকীয় ঢং-এ বসে আছে একটি অসপ্রে ঈগল। বেশ কিছুটা কাছে যাওয়ার সুযােগ পাওয়া গেল। মনের সুখে ছবি তােলার সাথে সাথে উড়ে এল একটি ব্রাহ্মিণী কাইট। সেও আমাদের লেন্সর সামনে নির্ভয়।
ফিরতি পথে আবার দেখা হল ফ্ল্যামিংগােদের সাথে। বিকেলে আবার জলে ভাসলাম। এবারে লক্ষ্য বিকেলের পড়ন্ত সূর্যের আলোেতে ফ্ল্যামিংগােদের ছবি তােলা। সূর্যাস্তের সময় ফ্ল্যামিংগােদের সেই রূপ ভােলার নয়। একসময় উড়তে শুরু করল ফ্ল্যামিংগােদের দল। সারাটা আকাশ যেন গােলাপি হয়ে উঠল। সব মিলিয়ে পাখিৰ দেশ ভিগােয়ান যে কোনও পাখিপ্রেমির কাছে স্বর্গস্বরূপ। মহারাষ্ট্রের এই অখ্যাত গ্রামটি
প্রকৃতিপ্রেমীদের পর্যটন মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। তবে কিছু মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও বেশ। স্পষ্ট। অনেক মানুষ আসছেন যারা পাখিদের দূর থেকে তাড়াচ্ছেন। হইহট্টগােল করছেন। পাখিদের শান্তি যে এতে বিঘ্নিত হতে পারে এবং তারা যে এখান থেকে তাদের মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে, সেই সচেতনতা এদের নেই বললেই চলে। তবে আশা করাই যায় সারা দেশ থেকে আরও পাখিপ্রেমিরা ওখানে যেতে শুরু করলে আপনিই এই সচেতনতা সৃষ্টি হবে মানুষের মধ্যে।
পরদিন ভােরে আমাদের ফিরে আসার ট্রেন। গােছগাছ করে তাড়াতাড়ি বিছানায় যাব এমনি ভাবছিলাম। কিন্তু চমক বুঝি এখনও বাকি। দত্ত নাগাড়ে এসে আমাদের জানালাে হােটেলের পাশেই একটি ছােট্ট টিলার ওপর ডিনারের পর অভিযান। লক্ষ্য নাইটজার। প্রবল উৎসাহে টর্চ হাতে বেরােলাম নাইটজার দেখতে। বেশি খোঁজাখুঁজি করতে হল না। কিছুটা যেতেই দেখলাম গুটিশুটি মেরে পথের ধারেই বসে আছে একটি নাইটজার। টর্চের আলাে পড়তেই ডাক ছেড়ে উড়ে গেল। শেষ বেলায় এই নৈশ অভিযান সত্যি আমাদের কাছে একটি মনােরম অভিজ্ঞতা। পরিযায়ী অবং স্থানীয় পাখিদের প্রাচুর্য নিয়ে ভিগােয়ান এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এখানে কোনও প্রজাতির পাখিই যেমন বিরল নয়। আমাদের সবার দায়িত্ব এই পাখিদের শান্তিধামটিকে টিকিয়ে রাখা।
0 Comments