The word ‘ninety’ means one less than one crore, that is, ninety-nine lakh ninety-nine thousand ninety-nine. The distance from Agartala in Tripura to Unkoti is 176 km. Unkoti is only 9 km away from the nearest subdivision town of Kailasahar. There are many idols dug out of the jungle or stone idols.

‘ঊনকোটি’ শব্দের অর্থ হল কোটির চেয়ে একটা কম অর্থাৎ নিরানব্বই লক্ষ নিরানব্বই হাজার নয়শাে নিরানব্বই। ত্রিপুরার আগরতলা থেকে ঊনকোটির দূরত্ব ১৭৬ কিলােমিটার। নিকটস্থ মহকুমা শহর কৈলাসহর থেকে মাত্র ৯ কিলােমিটার দূরে ঊনকোটি। এখানকার জঙ্গলভরা পাহাড়ের গায়ে খােদাই করে কিংবা পাথরের তৈরি দেবমূর্তি রয়ে অনেকগুলি। এক সময় তা ছিল অসংখ্য। লােকের বিশ্বাস এককোটি থেকে মাত্র একটি কম। সেই থেকে পাহাড়ের নাম হয়েছে ঊনকোটি। এখনও এখানে চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে পাথরের তৈরি বহু মূর্তি, পাহাড়ে গায় খােদিত হয়ে আছে শিবের বিশাল বিশাল মূর্তি। মূর্তিগুলি দু'রকমভাবে নির্মিত। কিছু মূর্তি পাথর দিয়ে বানানাে, কিছু পাহাড়ের গায়ে খােদাই করা। খােদাই করা মূর্তিগুলিই বিশাল আয়তনের। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য হল শিবের বদনমণ্ডলের মূর্তিটি। শিবের এই মুখটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। সারা পৃথিবীতে শিবের এত বড় মুখ আর কোথাও নেই। শিবের আরও দুটি বিশাল মূর্তি রয়েছে পাহাড়ের গায়ে ঊনকোটিতে প্রবেশের মুখেই। এ ছাড়া আছে। গণেশের নানা আকারের অনেকগুলি মূর্তি, দুর্গা, বিষ্ণু, রামলক্ষ্মণ, রাবণ, ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর ইত্যাদি দেব-দেবীর নানা মূর্তি, নানান ভাস্কর্য। সব মিলিয়ে শ'খানেক হবে সংখ্যায়। কোনাে সময় হয়তাে আরও অনেক ছিল, এখন চারিদিকে কেবল পাহাড় জঙ্গল আর ঝরণা। মূর্তিগুলির বেশিরভাগই ভাঙ্গাচোরা, কিন্তু শিল্পকর্ম নিঃসন্দেহে উচ্চ প্রশংসার দাবি রাখে। ঊনকোটির ইতিহাস অজানা। 

দুটো লােককথা প্রচলিত আছে এই পুণ্যতীর্থটিকে ঘিরে। ঊনকোটির এই পাহাড়টির নাম রঘুনন্দন পর্বত। একদিন কৈলাসপতি শিব দেবকুল পরিবৃত হয়ে বারাণসী যাচ্ছিলেন এই পথ দিয়ে। পথে সন্ধে হয়ে এলে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হল এই রঘুনন্দন পর্বতে। পথশ্রমে ক্লান্ত দেবতারা ঘুমিয়ে পড়লেন। পরদিন সূর্যোদয়ের আগে সবাইয়ের বারাণসী রওনা দেওয়ার কথা। কিন্তু দেবাদিদেব মহাদেব ছাড়া আর কারাে ঘুম ভাঙল না। একমাত্র মহাদেবই যাত্রা করলেন বারাণসীর দিকে। ঘুমন্ত দেবতাদের ঘুম ভাঙল না আর। অনন্তকাল ধরে তারা পাথর হয়ে রয়ে গেলেন এই রঘুনন্দন পর্বতে। সেই থেকে রঘুনন্দন পর্বত হয়ে গেল দেবতীর্থ ঊনকোটি। দ্বিতীয় লােককথাটি বলছে, কালুকামারের কাহিনী। ত্রিপুরা বহু যুগ থেকেই শিবের পূজারী। কালুকামারের ইচ্ছা ত্রিপুরাতেই গড়ে উঠুক নব কাশীধাম। একদিন তিনি দেবাদিদেব মহাদেবের স্বপ্নাদেশ পেলেন। তাতে তাকে বলা হল, তিনি যদি রঘুনন্দন পাহাড়ে এক রাত্রিতেই এক কোটি দেবতার মূর্তি বানাতে পারেন, তবে রঘুনন্দন পাহাড়ই হবে নব কাশীধাম। দক্ষ শিল্পী কালুকামার তার সহশিল্পীদের নিয়ে একদিন কাজে লেগে গেলেন। পাহাড়ের গায়ে পাথর খােদাই করে, উপত্যকার পাথর কুঁদে তৈরি হতে থাকল একের পর এক দেবমূর্তি। রাত ভাের হয় হয় কালুকামার দেখলেন এক কোটি মূর্তি হতে আর একটা মাত্র বাকি। কালুকামার ভাবলেন রাত ভাের হওয়ার আগেই বাকী মূর্তিটা অনায়াসেই হয়ে যাবে। তার আগে নিজের একটা মূর্তি বানান যাক। দেবমূর্তিদের সঙ্গে নিজের মূর্তি বানাতে চাইলেন তিনি। নিজের মূর্তি বানাতে গিয়ে দেরি হয়ে গেল। রাত হল ভাের। ডেকে উঠল কাক। দেবমূর্তি হল এক কম এক কোটি ঠিকই, কিন্তু রঘুনন্দন পাহাড় আর হতে পারল না নব কাশীধাম।। 

প্রত্নতাত্ত্বিক পীঠভূমি ঊনকোটি। এর প্রাচীনত্ব নিয়ে নানা মুনির নানা মত। ত্রিপুরার রাজ পরিবারের ইতিহাস ‘রাজমালা’ বলছে মহারাজ বিমারের পুত্র কুমার সুপ্রাচীনকালে মনু নদীর তীরে ছাম্বুলনগরে শিবারাধনা করেছিলেন। কারাে কারাে মতে ঊনকোটি ও মনু নদীর কাছাকাছি কৈলাসহরই ওই ছাম্বুলনগর। অনেকে আবার মনে করেন “কৈলাসের হর অবস্থিত এই অর্থেই ঊনকোটি সংলগ্ন অঞ্চলের নাম ‘কৈলাসহর’। মহামুনি কপিল নাকি এখানে তপস্যা করেছিলেন। রাজমালা বলছে, রাজা রাজধর মাণিক্য ঊনকোটি তীর্থ দর্শন করেছিলেন। পুরাতত্ত্ব বিভাগ বলছে, তীর্থভূমি ঊনকোটির মূর্তিগুলি অষ্টম বা নবম শতাব্দীর, কেউ কেউ বলছেন, এটি পালযুগের শৈবতীর্থ। কারও মতে, এগুলি আরও অনেক আগে নির্মিত। অধিকাংশ মূর্তিই ভূমিকম্প কিংবা অন্য কোনাে প্রাকৃতিক কারণে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। 

পাথরের দেবমূর্তি, পাহাড়ের গায়ে খােদিত ভাস্কর্য, আকর্ষণীয় নৈসর্গিক দৃশ্য - সব মিলিয়ে ঊনকোটি এক অত্যাশ্চর্য পীঠভূমি। ছােট্ট একটা ঝরনা নেমে এসেছে পাহাড়ের চূড়া থেকে। সেই জল পাথরের মাঝখানে সৃষ্টি করেছে কুণ্ড। এই কুণ্ডের নাম ‘অষ্টমীমুণ্ড। কেউ কেউ বলেন সীতাকুণ্ড। এখানেই পুণ্যার্থীরা শিবরাত্রি, মকর সংক্রান্তি এবং অশােকাষ্টমীতে ভিড় করেন পুণ্যস্নানের জন্য। তখন মেলা বসে ঊনকোটিতে। ঊনকোটি দেখার পর্ব শেষ হয়। এবার ফিরে চলা আগরতলা। কুমারঘাটে এসে এন এইচ ৪৪ ধরা। আবার কনভয়, আবারাে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর পাহারা। আগরতলা ফেরা সন্ধ্যায়। এখানের কোনাে হােটেলে রাত্রিবাস।