I went to Bhuepal on holiday. Vhapal is a very beautiful city. From there I left Panchmarhi. The only evergreen hill town in Madhya Pradesh is Panchmarhi.

ভূােপালে গিয়েছিলাম ছুটিকাটাতে। বেশ চমক্কার শহর ভােপাল। ওখান থেকে রওনা দিলাম পাঁচমাড়ি। মধ্যপ্রদেশের একমাত্র চিরসবুজে ছাওয়া পাহাড়ী শহর ‘পাঁচমাড়ি। সকালে কিছু শুকনাে খাবার নিয়ে হাবিবগঞ্জ (ভােপাল স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে) বাস স্ট্যান্ড থেকে পাঁচমাড়িগামী দূরপাল্লার বাসে চেপে রওনা দিলাম। বাস আপন গতিতে এগিয়ে চলছিল। চড়াই, উত্রাই পেরিয়ে পাহাড়ী রাস্তার রুক্ষতা, সৌন্দর্য দেখতে দেখতে কখন যে ‘পিপারিয়া এসে পৌঁছলাম বুঝতেই পারলাম না। পিপারিয়া’তে যাত্রীদের কিছুক্ষণের বিশ্রামের জন্য বাসটি থেমেছিল। পাহাড়ী এলাকার পথশােভা মনােরম। পথ উঠেছে ৩৬৬৪ ফুট উঁচুতে। পথের একধারে গভীর খাদ, অন্যদিকে পাহাড়ী প্রাচীর। বাসটি দেরিতে পৌঁছনাের জন্য পাঁচমাড়ি পৌঁছতে আমাদের বিকেল হয়ে গিয়েছিল। বাস স্টান্ড-এ পা রেখে বুঝলাম সত্যই মনােমুগ্ধকর সৌন্দর্য। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। প্রকৃতির এই ভুবনভােলানাে সৌন্দর্যের প্রেমে আকুল হয়েই মনে হয় ব্রিটিশরা পাঁচমাড়িতে হিল রিসর্ট ও স্যানেটোরিয়াম গড়ে তুলেছিলেন। পুরাে শহরটাই বাগিচার রূপ নিয়েছে। আমরা বাস স্ট্যান্ড থেকে একটি জীপ নিয়ে মধ্যমানের হােটেলে উঠেছিলাম। পাঁচমাড়ি থাকা-খাওয়ার পক্ষে একটু ব্যয়বহুল। ‘পাঁচমাড়ি বেড়ানাের মনােরম সময় মার্চ থেকে মে মাস আবার অক্টোবর ও নভেম্বর মাস। তবে আগে থেকে হলিডে হােম, বাং লাে, কটেজ বুক করে যাওয়াটাই উচিত হবে বলে মনে হয়। আমরা পায়ে হেঁটে একটু বেড়িয়ে নিলাম। সন্ধ্যে নামার সঙ্গে সঙ্গে হাড়কাঁপানাে ঠাণ্ডা। রাতে হােটেলে খেয়ে নিয়ে শুতে গেলাম। পরদিন সকাল সাড়ে ছ'টায় ড্রাইভার এসে হােটেলের দরজায় হর্ণ বাজালেন ভিউ পয়েন্ট দেখাতে নিয়ে যাবেন বলে। আমরা তৈরি ছিলাম। বেরিয়ে পড়লাম মারুতি জিপসি নিয়ে। আমাদের ড্রাইভার আরাে দুটো পরিবারকে অন্য হােটেল থেকে তুলে নিলেন। দুটো পরিবারই বাঙালি ছিল। প্রায় ৫০টিরও বেশি ভিউ পয়েন্ট রয়েছে এখানে। প্রথমে আমাদের জীপ এসে থামল বাস স্ট্যান্ডের বিপরীতে ২ কিমি দূরে শ'খানেক ফুট নিচুতে জটাশংকর গুহাটি দেখার জন্য। পাথর এখানে জটার রূপ নিয়েছে। জটা পেঁচিয়ে বেণীর মতাে আকার নিয়েছে, তাই এর নাম জটাশংকর। গুহার মাথায় জলের ধারা বইছে। এই ধারা থেকেই জম্মু নদীর জন্ম। জটাশংকর দর্শন করেই আমরা পঞ্চপাণ্ডবের গুহাদর্শনে গেলাম। কিংবদন্তী অনুসারে গুহা পাঁচটিতে আজ্ঞাতবাসকালে পঞ্চপাণ্ডবেরা নাকি আশ্রয় নিয়েছিলেন। বৌদ্ধবিহারধর্মী কারুকার্যময় এই গুহা পাঁচটি টর্চের আলাে ফেলে দেখতে হবে। ভূতাত্ত্বিকদের মতে এটি বৌদ্ধ বা জৈন গুহা। শহর থেকে ১৩ কিমি দূরে ভূমিকম্পে ফাটল হয়েছে পাহাড়ে। ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীর খাদ। চারিদিকে নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী দেখার জন্য ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী ভিউপয়েন্টের প্রশস্তি। এরপর মহাদেব পাহাড়ের পাদদেশে মহাদেব গুহায় পৌঁছে দেবাদিদেব মহেশ্বর দর্শন করলাম। জল পড়ছে পাহাড় চুইয়ে। ডানদিকে দেবী পার্বতীর গুহা। আরণ্যক পরিবেশ। একটু এগিয়ে আর এক আশ্চর্যজনক গুহা ‘গুপ্ত মহাদেব’। একই পাহাড়ের মাঝে ফাটল — অন্ধকারাচ্ছন্ন সংকীর্ণ পথ, মােমবাতির আলােয় বিগ্রহ দর্শন করতে হয়। এই আরণ্যক পরিবেশে বনচরদের উৎপাত ভীষণ। এখানে আমলকী গাছ থেকে আমলকী ফল পেড়ে খাওয়ার আনন্দ এক নতুন মাত্রা যােগায়। এরপর জীপ আমাদের নিয়ে রওনা হল ১২০০ একর জমি নিয়ে তৈরি সরকারি উদ্যান দেখাতে। একে একে রেসকোর্স, গল পিচ, রাজেন্দ্র গিরি (সুন্দর সাজানাে বাগিচা) দেখা হল। বী-ফলস্ েজলের ধারা পড়ছে কয়েকশাে ফুট নিচুতে নামতেও হয়েছে ততােধিক। খুবই নির্জন এলাকা। দলবদ্ধভাবে যাওয়াটাই ভালাে। পাঁচমাড়ি সেনানী ব্যরাকটা দেখার মতাে। প্রাচীন গির্জাটি একটি নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে বেড়াবার তালিকায়। এই গির্জাটির ভেতরে বেলজিয়াম গ্লাসের ওপর অঙ্কিত চিত্রাবলী সত্যিই মুগ্ধ করে। সেদিনের সফরের সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল ধূপগড়ের সূর্যাস্ত দেখা। শহর থেকে দূরত্ব হবে ১০ কিলােমিটার। পথের শেষ ২ কিমি ১১০০ ফুট চড়াই ভেঙে উঠতে হয় সাতপুরা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ৪৪২৯ ফুট উঁচু ধূপগড়ে। এখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার মতাে। আমরা সূর্যাস্ত দেখতেই এই দুর্গম পথ বেয়ে উঠেছিলাম। এখানকার ড্রাইভাররা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে গাড়ি চালান। রেস্ট হাউস হয়েছে পাহাড়ের চুড়ােয়। ছেটোখাটো খাবারের স্টল রয়েছে। পাহাড়ের চুড়াে থেকে সূর্যাস্ত দেখাটা চিরদিন মনে থাকবে। আসাধারণ সৌন্দর্য। গাঢ় অন্ধকার নামার আগেই হােটেলে ফিরে এলাম। রাতটুকু বিশ্রাম। সারাদিনের ক্লান্তি জুড়ােতে না জুড়ােতেই সকাল হয়ে গেল। আবার তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। সেদিনের তালিকায় ছিল — বিগ ফলস্, লিটল ফলস্, ডাচেস ফলস্, চৌরাগড় শিবমন্দির। তবে চৌরাগড় শিবমন্দির এতটাই খাড়া যে শেষ পর্যন্ত সিঁড়ি ভেঙে উঠতে ব্যর্থ হলাম। দেবতা দর্শন হল না, এটাই ‘পাঁচমাড়ি’ ভ্রমণে আমাদের অসম্পূর্ণতা। অম্বা মন্দির, অপ্সরা বিহার (অত্যন্ত নির্জন এলাকা) রজতপ্রপাত অপূর্ব। এককথায় পাঁচমাড়ির’রূপ মাধুর্যের কথা বলাটা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার। পাঁচমাড়ি’ ভ্রমণপিপাসু বাঙালির মনে ভীষণভাবে প্রভাব ফেলবে। সময় ফুরিয়ে গিয়েছে, তাই ঘরে ফেরার পালা। মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল, মনে হচ্ছিল আর কিছু দিন যদি থাকতে পারতাম, তাহলে ভালাে হত। পাঁচমাড়ি সত্যিই অপরূপা তুমি।

শেলী বিশ্বাস