I always feel a special attraction of  Kedarkhand in the Garayal Himalayas in Uttarakhand. This is how I am going to enjoy the heavenly beauty of nature in Madmaheshwar. Very early in the morning I started my journey from Haridwar for the purpose of Ukhi Math. Distance 208 km. The path is gone. Hrishikesh, Kaudiala, Devprayag, Rudraprayag. Old ways but forever new feelings.

গাড়ােয়াল হিমালয়ের কেদারখন্ডের একটা আলাদা আকর্ষণ সবসময় অনুভব করি। এইরকমই প্রকৃতির স্বর্গীয় সৌন্দর্যের পরশ পেতে চলেছি মদমহেশ্বরে। খুব সকালে হরিদ্বার থেকে যাত্রা শুরু করি উখি মঠের উদ্দেশ্যে। দূরত্ব ২০৬ কিমি। পথ গেছে। হৃষীকেশ, কাউডিয়ালা, দেবপ্রয়াগ, রুদ্রপ্রয়াগ হয়ে। পুরানাে পথ কিন্তু চির নতুন অনুভূতি। গাড়িতে আধঘণ্টার মধ্যেই চলে এলাম স্বর্গলােকের তােরণদ্বার হৃষীকেশে। এখান থেকেই পাহাড়ি পথের হাতছানি, শুরু হল রােমাঞ্চকর মােটর যাত্রা। আমাদের ডানদিকে অনেক নিচে প্রবাহমান গঙ্গা, সেই কবে ভগীরথের তপস্যায় মর্তে আগমন করেছিলেন সাগর রাজার সন্তানদের প্রাণহীন নশ্বর দেহে প্রাণ সঞ্চারের জন্য। এখনও ভারতবাসীর প্রাণ ভােমরা এই মা গঙ্গা। একে একে চলে এলাে রামঝােলা, গীতাভবন, লছমন ঝােলা। সকালের নরম আলােয় গঙ্গার এই ভাবগম্ভীর রূপ স্মৃতির পর্দায় প্রতিবারই নতুন করে প্রলেপ ফেলে। গাড়ির গতি ধীরে ধীরে বাড়ছে, একের পর এক বাক পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে। রাস্তার উচ্চতা বাড়তে থাকে চারপাশে প্রকৃতির নিপুণ হাতে গড়া দৃশ্যপট দেখতে দেখতে চলে এলাম কাউডিয়ালা। হৃষীকেশ থেকে কাউডিয়ালার দূরত্ব ৩৭ কিমি। এখানেই প্রাতঃরাশের বিরতি। স্বল্প পরিচিত গঙ্গার এই ছােট পারটুকু গাড়েয়াল মন্ডল বিকাশ নিগমের দখলে। স্বপ্নের মতাে সাজানাে মায়াময় কটেজগুলাে ধাপে ধাপে নেমে গেছে গঙ্গার পার পর্যন্ত। বিশাল বিশাল পাইন দেবদারু তার শাখাপ্রশাখা দিয়ে ছাতার মতাে ঢেকে রেখেছে কটেজগুলােকে। গঙ্গার সর্পিল গতিপথটি ভারি মনােরম। জলধারার দুইধারে নুড়ি, বােল্ডার, তারপর বালিয়াড়ির পার শেষ হতেই শুরু নিবিড় জঙ্গলে ঢাকা পাহাড় ক্রমশ উঠে গেছে আকাশের দিকে। শান্ত পরিবেশ, নদীর কলতান আর অজানা অচেনা পাখির কাকলী। শান্ত সৌন্দর্য পিয়াসীদের ভাললাগার ঠিকানা। গঙ্গার এই অনবদ্য নৈসর্গিক দৃশ্য উপভােগ করতে চাইলে অবশ্যই জি এম ভি এন-এর কটেজেই থাকতে হবে। কোনও একসময় এখানে থাকব, এই আশা নিয়ে যাত্রা শুরু করি। পথের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির গতিও কমতে থাকে। আমাদের ডান হাতে গঙ্গা, পথ নদীর উজানে। মাঝে মাঝে পাহাড়ের ঢালে ছােট ছােট গ্রাম। ঘর বাড়ির সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাঝে মধ্যে পাকা বাড়িও আছে। পাহাড়ের নিচের ঢালে সেই ধাপ চাষ। কোথাও ফসল কাটা শেষ, কোথাও সােনালী ফসল দোল খাচ্ছে। দেখতে দেখতে ৩২ কিমি পথ পেরিয়ে চলে এলাম দেবপ্রয়াগে। গােমুখ থেকে আসা ভাগীরথি আর মন্দাকিনী ও অলকানন্দার মিলিত ধারার মিলন কেন্দ্র। আমার কাছে গাড়েয়ালের শ্রেষ্ঠ প্রয়াগ এই দেব প্রয়াগ রূপেও মাহাত্ম্যে। মন চায় না দেবপ্রয়াগ ছেড়ে যেতে। এগােতেই হবে। দুই-তিন কিমি যাওয়ার পর রাস্তা সমতল। নদীর পাশ দিয়ে পথ, দেবপ্রয়াগ প্রায় আগের মতােই আছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়েছে শ্রীনগরের। প্রভূত উন্নতির লক্ষণ সারা শ্রীনগর জুড়ে। প্রশস্ত রাস্তাঘাট, বড় বড় বাড়ি, ব্যাঙ্ক, আধুনিক হাসপাতাল, ঝকঝকে দোকানপাট, বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক জীবনযাত্রার সবকিছুই এখানে বিদ্যমান। গাড়ােয়ালের ব্যস্ত ব্যবসা কেন্দ্র।।

গাড়ি ছুটে চলল। দেবপ্রয়াগ থেকে প্রায় ৭০ কিমি এসে রুদ্রপ্রয়াগে গাড়ি থামে। বদ্রীনাথ থেকে আসা অলকানন্দা আর কেদার থেকে আসা মন্দাকিনীর সঙ্গম এই রুদ্রপ্রয়াগ। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে মনে হয় নদী তাে নয়, সমুদ্রের পারে দাঁড়িয়ে আছি। চমৎকার জায়গা। আর জিম করবেটের কথা না বললেই নয়। এই রুদ্রপ্রয়াগেই ভয়ঙ্কর নরখাদক চিতা শিকার করে গ্রামবাসীদের উদ্ধার করেন। দুপুরের খাওয়া সেরে গাড়িতে উঠি। ক্রমশ উঠছি। ৪০ কিমি এসে গুপ্ত কাশী। এখানকার জি এম ভি এন-এর সুন্দর লজে দু তিন দিন আনন্দে কাটানােও যায়। পাইন গাছের ফাঁক দিয়ে চৌখাম্বা আর কেদার ডােম দেখতে দেখতে দিন কেটে যাবে। এগিয়ে চললাম মন্দাকিনী পেরিয়ে ১২ কিমি যেতেই উখি মঠ। থাকার ব্যবস্থা হয় অনুশ্রী লজে। উখি মঠের মাহাত্ম্য কেদারের থেকে কোনও অংশে কম নয়। শীতে কেদার ও মদমহেশ্বর মন্দির যখন বন্ধ থাকে (দীপাবলী থেকে অক্ষয় তৃতীয়া পর্যন্ত) এখানেই দেবতার পূজা হয়। এখান থেকে কেদার শৃঙ্গ দৃশ্যমান। তীর্থযাত্রী বা হিমালয় সৌন্দর্য পিয়াসী সবার কাছেই উখিমঠের গুরুত্ব। অপরিসীম। থাকার জন্য জি এম ভি এন-এর ট্যুরিস্ট লজটি অসাধারণ। কেদার ডােম মুহূর্তের জন্যও চোখের পলক ফেলতে দেবে না। তাছাড়া যাত্রী সেবায় সদা জাগ্রত ভারত সেবাশ্রমের ৭তলা ধর্মশালা, দাতব্য চিকিৎসালয়, অবৈতনিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। আশ্রমের মহারাজরা বিরাট কর্মর্যজ্ঞ করে চলেছে। লজের বারান্দায় বসলে দেখা যায় সামনে খােলা দিগন্ত। ডানদিকে সূর্যাস্তের শেষ রশ্মি কেদারশৃঙ্গকে রাঙিয়ে দিল কয়েক মুহূর্তের জন্য। সব কিছু দেখে মন প্রশান্তিতে ভরে গেল।। | রাতে খাওয়া টেবিলে ঠিক হল কালই মদমহেশ্বর যাত্রা করব। উখিমঠ থেকে খুব সকালেই বের হই। আজই আমরা মদমহেশ্বরের পথে হাঁটা শুরু করব। উনিয়ানা গ্রাম পর্যন্ত যাব গাড়িতে দূরত্ব ২৫ কিমি। এঁকে বেঁকে পথ এগিয়ে চলেছে। ভােরের পাহাড়ি পথ, ঠাণ্ডার কামড়ে সবাই জুবুথুবু, চোখ শুধু বাইরে পাহাড়ের মাথায় সবে আলাে পড়তে শুরু করেছে। দুরের পাহাড় ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। মনােরম পরিবেশ। মদমহেশ্বর গঙ্গার উপর ব্রিজ পেরিয়ে এলাম। এই নদীকে অনেকে মধুগঙ্গাও বলে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গাড়ি উনিয়ানা গ্রামে এসে থামল। উচ্চতা ৫৫৭৭ ফুট।

এখান থেকে হাঁটা শুরু। ১ কিমি আগে ব্রিজের দূরবস্থার কারণে গাড়ি রাশি পর্যন্ত যেতে পারবে না। কোলাহলহীন শান্ত পরিবেশ, চারপাশ গভীর জঙ্গলে ঘেরা উনিয়ানা খুব ছােট্ট একটি গ্রাম। মােট তিন চারটে দোকানপাট নিয়ে এদের রােজনামচা। পাের্টার তার বাড়ি গেছে খবর দিতে। তার জন্য এক ঘণ্টা লেট। ধরমপাল আমাদের ভাঙা ব্রিজের কাছে নামিয়ে দিল। ধরমপালকে বিদায় জানিয়ে আমরা হাঁটা শুরু করি। ঘড়িতে তখন বাজে ৯.১৫ মি। এখান থেকে রাশি ২ কিমি। রাস্তা প্রায় সমতল। উচ্চতাজনিত কষ্ট নেই। গাছের ছায়ার মধ্যে দিয়ে পথ। এতক্ষণে উনিয়ানা গ্রাম পাহাড়ের আড়ালে যেতেই চড়াই বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির স্বাদ নেওয়া, আবার হাঁটা। প্রায় ৪০ মিনিট হাঁটার পর দু-একটা ঘর বাড়ির দেখা মেলে। আরও মিনিট ২০ হাঁটার পর আমরা রাশিতে পেঁৗছই। উচ্চতা ৬৪৬০ ফুট। কিছুটা বিশ্রাম দরকার। | রাশি বেশ বর্ধিষ্ণু গ্রাম। চাষাবাদই এঁদের মুখ্য জীবিকা। গােটা গ্রামটাই ধাপ চাষে ঘেরা। মাঝে মাঝে লাল রামদানার ক্ষেত রাশিকে আরও রমণীয় করে তুলেছে। আগামী দিনে মােটরের রাস্তা গণ্ডার পর্যন্ত চলে যাবে। রাশি তখন ব্যস্ত ট্যুরিস্ট সেন্টার হবে বলেই মনে হয়। তারই তােড়জোড় চলছে গােটা রাশি জুটেড়। এখানকার রাকেশ্বরী মন্দিটি বহু পুরনাে। দু’পাশে গগনচুম্বি সবুজ পাহাড়ের মাঝে ধ্যানমৌলি বরফমােড়া হিমালয়ে নিচে এর অবস্থান। মন্দির গঠনের শৈলিও অপূর্ব। রাকাদেবী হলেন এই মন্দিরের আরাধ্যা দেবী। একসময় স্বর্গীয় উমাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়ের স্নেহধন্য ছিলেন এই মন্দিরের পুরহিত জনানন্দ। আবার হাঁটা শুরু করি। যাব গন্ডার পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ছয় কিমির হাঁটা পথ। উতরাই পথ, বেশ প্রশস্ত। কিছুটা এগােতেই মূল রাস্তা বন্ধ। মেরামতের কাজ চলছে। যাই হােক আবার সবাই মিলে চলতে শুরু করলাম। মাথার উপর চড় রােদ। তাপজনিত কষ্ট ছাড়া আর কোনও কষ্ট নেই। উতরাই পথ গন্ডার পর্যন্ত। ৩কিমি পথ পেরিয়ে এসে থামলাম বিশাল এক ঝর্ণার নিচে। অনেক উপর থেকে লাফিয়ে বিরাট এক বােল্ডারের উপর আছড়ে পড়ে দুই ধারায় নেমেছে। জীবন্ত এক ভাস্কর্য। অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্য। চোখের তৃপ্তিতে পথশ্রম কমে। উতরাই পথে আরও সাড়ে তিন কিলােমিটার হেঁটে গন্ডার পৌছাই। উচ্চতা ৫৫৪০ ফুট। উঠলাম শ্রী মদমহেশ্বর লজে। এখানেই আজ রাত্রি বাস। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর এই গ্রামের আশেপাশে ঘুরে বেড়িয়ে কাটলাে। গন্ডার বেশ বর্ধিষঃ গ্রাম। চাষাবাদ ভালই হয়। এখানকার শিব মন্দিরটি খুব পুরনাে।

পরের দিন খুব সকালে বের হই। আজ পদযাত্রার দ্বিতীয় দিন। আজই আমরা মদমহেশ্বরে পৌছে যাব, প্রকৃতি যদি বিরূপ না হয়। গন্ডার থেকে মদমহেশ্বরের দূরত্ব ১১ কিমি। রােদ ঝলমলে সকালে উতরাই পথে নেমে এলাম সরস্বতী নদীর পাড়ে। এই নদীকে অনেকে মার্কন্ডেয় গঙ্গা বলে। উৎস নন্দিকুন্ড থেকে। প্রবল বেগে জলরাশি নেমে মিলেছে মদমহেশ্বর গঙ্গার সাথে। মিলনটা অবশ্য এখান থেকে দেখা যাচ্ছে না। পাইন ও দেবদারুর জঙ্গল একে ঢেকে রেখেছে। নদী পার হতেই রাস্তা উর্ধ্বমুখী। শুরু হল চড়াই। আমাদের ডান হাতে সরস্বতীর নদীখাত, বাঁয়ে বানতলীর পাহাড়। সূর্যের আলাে এখনও এই পাহাড়ে পড়েনি শিশির ভেজা পথ পেরিয়ে উঠে এলাম ৬২৩৩ ফুট উঁচু বানতলীতে। পেছন ফিরতেই চৌখাম্বার মুখােমুখি। সকালের স্বচ্ছ রােদে ঝলমলে রূপ। মদমহেশ্বরের পথে এই প্রথম দেখা। অতুলনীয় প্রাকৃতিক শােভা, চারপাশে সবুজের সমারােহ। বানতলীর মুগ্ধতা নিয়ে আবার হাঁটতে থাকি। পথ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী, মাঝে মাঝে বােল্ডারের সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হচ্ছে। হঠাৎ প্রকৃতির রূপ বদলে গেল। আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। মাথার ওপর কালাে মেঘ জড়াে হতে শুরু করেছে। প্রকৃতি দেখা মাথায় উঠল। খাট্টারার আগে দাঁড়াবার আর জায়গা নেই। যতটা সম্ভব দ্রুত হাঁটতে থাকি। পাের্টার ‘জলদি আইয়ে সাব বারিষ আগিয়া’ বলে শীঘ্র অন্তর্ধান হল এছাড়া ওরই বা কি করার আছে। আমরা কাক ভেজা হয়ে ৬৮৮৯ ফুট উঁচু খাট্টারায় পৌছলাম। এখানে একটাই বাড়ি হােমস্টে-এর জন্য। প্রয়ােজনে রাত কাটানাের ব্যবস্থা আছে। বৃষ্টি থামল প্রায় পৌনে দুঘণ্টা পর। বৃষ্টি থামার পর হাঁটা শুরু করি যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি হাঁটতে থাকি। মাঝে মাঝেই কাদা মাখা পিচ্ছিল পথ। এতে হাঁটার গতিও কমে যায়। বিরাট বিরাট গাছের ছায়া ঢাকা পথ। আকাশ এখন অনেক পরিষ্কার। নীলিমার চাদর বিছিয়ে নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত। চারপাশ বেশ মনােরম। শুধু চড়াই ভাঙার কষ্ট। কখনও দাঁড়িয়ে কখনও বসে বিশ্রাম নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে উঠে এলাম ৭৭৪২ ফুট উঁচু নানুরে।।

মধ্যাহ্ন ভােজের বিরতি। হােটেলটা ছিল একেবারে পাহাড়ের মাথায়। হােটেল যেরকমই হােক স্থান নির্বাচনে প্রশংসার দাবি রাখে। সামনে যতদূর চোখ যা বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ের ঢেউ দিগন্ত রেখা ছুঁয়েছে। নীলিমার আঁচলে সাদা মেঘের নক্সা কাটার খেলা দেখতে দেখতে খাওয়া শেষ হয়। আবার হাঁটা শুরু। গাইড জানায় পুরাে রাস্তাই চড়াই, তবে ছায়া শীতল পথ ৮৫৯৫ উঁচু মায়াখাম্বা চলে এলাম। এখানে মাত্র দু-তিনটে হােটেলই আছে। প্রয়ােজনে থাকাও যায়। পানীয় জলের ট্যাঙ্ক থেকে জল ভরে তাড়াতাড়ি পা চালাই। মদমহেশ্বর আর বেশী দূরে নয়। উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে গাছপালার ধরন একটু অন্যরকম হয়। একটা বড় কুঁড়ে ঘরের ধারে এসে দাঁড়াই। লেখা কুনচট্টি। এটাই হল শেষ চট্টি, উচ্চতা ৯১২০ ফুট। রডডেনড্রনের বনের মধ্যে দিয়ে চড়াই পথ টানা চড়াই, এটাই শেষ চড়াই সব পথের যেমন শেষ আছে, তেমনি বনরেখা শেষ হতেই সবুজে ঢাকা ময়দান দূরে গগনচুম্বি সবুজ পাহাড়ের ছায়ায় মন্দিরের চূড়া দেখা দেয়। বিকেল ৩টে নাগাদ মদমহেশ্বরে পৌছাই। উচ্চতা ১১৪৭৩ ফুট। মন্দির কমিটির গেস্ট হাউসেই উঠি। | মন্দিরের গঠনশৈলী কেদারের মতােই। মন্দিরের ঠিক পেছন থেকেই সবুজ খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে বুঢ়া মদমহেশ্বর যাওয়ার

পথ। আজ আর বেরােনাে সম্ভব নয়। আকাশের অবস্থা খুবই খারাপ। একটু পরেই বৃষ্টি শুরু হল। মােমবাতি জ্বালিয়ে সবাই ঘরে | বন্দি হলাম। পুরােহিত খবর পাঠায় মন্দিরে আরতি শুরু হবে দেরি না করে চলে আসতে। বৃষ্টির মধ্যেই আরতি দর্শনে যাই। সুন্দর

ভক্তিময় পরিবেশ। আরতির এই শিল্পমন্ডিত উপস্থাপনা আমাদের আধ্যাত্মিক চেতনাকে জাগ্রত করে। ভগবানের প্রসাদ পেয়ে গেস্ট হাউসে ফিরি। কিন্তু বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ নেই। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডার তীব্রতা বাধ্য হয়ে স্লিপিং ব্যাগে ঢুকি।

তৃতীয় দিন, খুব ভােরে আমরা তৈরি, যাব বুঢ়া মদমহেশ্বর। গােটা মদমহেশ্বর তখনও ঘুমিয়ে। বাদ সাধল প্রকৃতি। আকাশ তখনও মেঘাচ্ছন্ন। ভারাক্রান্ত মনে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। কখন প্রকৃতি সদয় হবে। আকাশে দু-একটা তারার দেখা মিলতেই বেরিয়ে পরি। টর্চ জ্বেলে সন্তর্পণে হাঁটা শুরু করি। বুঢ়া মদমহেশ্বরের দূরত্ব ২কিমি। মদমহেশ্বর পেরিয়েই চড়াই পথ। পাকদন্ডি ধরে উঠছি। আকাশ এখন অনেকটা পরিষ্কার, প্রকৃতি সদয় হয়। ধীরে ধীরে চৌখাম্বা দৃষ্টিগােচর হয়। পাকদন্ডির বাঁক ঘুরতেই অলৌকিক দৃশ্য। সূর্যোদয়ের প্রথম আলাের ছটা চৌখাম্বার মাথায় রঙ পরিবর্তনের খেলা খেলছে। প্রথমে রক্তিম আভা ওপরে সােনালী। চড়াই ক্রমশ বাড়তে থাকে। শেষের প্রাণান্তকর চড়াই ভেঙে উঠে এলাম প্রায় ১২২০০ ফুট উচ্চতায়। বুঢ়া মদমহেশ্বরে। নিমেষে সমস্ত ক্লান্তি উধাও। আমরা মন্ত্রমুগ্ধ, এ কোথায় এলাম, চৌখাম্বা রাজকীয় ভঙ্গিমায় বিরাজ করছে। বুগিয়ালের উত্তর দিক ঘিরে প্রহরীর মতাে দাঁড়িয়ে আছে চৌখাম্বা, কেদার, নীলকণ্ঠ, হিমালয়ের এই বিশাল রূপ এখানে না এলে উপলব্ধি করা যায় না। তালের স্বচ্ছ জলে গিরিশৃঙ্গের প্রতিচ্ছবি। এ এক বর্ণনাতীত সৌন্দর্য। ছােট্ট মন্দির, বুঢ়া মদমহেশ্বরের পূজা দিয়ে নামতে শুরু করি বারবার পেছন ফিরে দেখতে থাকি হিমালয়ের রাজকীয় ভঙ্গিমা।