Daringbari is lonely, Daringbari is green, Daringbari is beautiful. Not to be seen for a moment, to be fascinated from time to time
ডারিংবাড়ি নির্জন, ডারিংবাড়ি সবুজ, ডারিংবাড়ি সুন্দর-অপরূপ। এক পলকের একটু দেখা নয়, পলে পলে মুগ্ধ হয়ে দেখা আর অনুভব করার মত শান্ত, সিগ্ধ এক ছােট্ট ভ্রমণের জন্য দুর্দান্ত ডেস্টিনেশন ডারিংবাড়ি।
আমাদের পড়শি রাজ্য উড়িষ্যার অন্যতম এক হিলস্টেশন ডারিংবাড়ি। ৫০০০ ফুট উচ্চতায় পাইনের জঙ্গল, কফি বাগান ও এক সবুজ সুন্দর উপত্যকায় ঘেরা ডারিংবাড়ি কন্বমল জেলায় অবস্থিত। ব্রিটিশ রাজত্বকালে জনৈক ব্রিটিশ ‘দারিংসাহেব’ এই জায়গা আবিষ্কার করেন। শীতকালে এখানে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে। তাপমাত্রা অনেক সময় শুন্য ডিগ্রিতেও নেমে যায়।
বহুকাল আগে কোনও এক প্রচণ্ড শীতে এখানে শিশির বিন্দু জমে বরফে রূপান্তরিত হয়েছিল। তাই সেই অভূতপূর্ব ঘটনা লােকমুখে অতিরঞ্জিত হয়ে কালক্রমে উড়িষ্যার কাশ্মীর’ কিংবা উড়িষ্যা দার্জিলিং বলে প্রচারিত হয়। এবং ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র এই লােক বিজ্ঞাপন। কিন্তু তা নিছকই অতিরঞ্জন। কিছু পাইন গাছ আছে বটে, পাহাড় আছে, টিলা আছে। কিন্তু কাশ্মীর দার্জিলিং সে নয়। ডারিংবাড়ি-ডারিংবাড়িই। সে নিজের রূপেই খ্যাত হতে পারে অনায়াসে। আমার যা কিছু আছে, তা তােমায় দিলাম’বলে গাইতেও পারে। পর্যটক তাতেই ধন্য হয়ে যাবেন।
ডারিংবাড়িকে ঘিরে রয়েছে ছ'টা জেলা। রায়গদা, গজপতি, গঞ্জাম, নয়াঘর, বৌদ্ধ ও কালাহান্ডি। ডারিংবাড়ির হিলটপ হল মুন্ডুক। সেখানে উঠে দাঁড়ালে দূরের সুন্দর সব জনপদ, অরণ্য দু’চোখ ভরে দেখে মুগ্ধ হওয়া যায়। সারিং-এরপি, ডারিংবাড়ি, গ্রীনবাড়ি, লাইনপাড়া হল এইসব জনপদ।
ডারিংবাড়ির হিল ভিউপার্ক-এর লম্বা প্রাচীর কন্ধমাল সংস্কৃতির আঁচড়ে উজ্জ্বল হয়ে আছে। এখানকার প্রাচীন উপজাতি হল ক’। তাদের প্রবীণ নারীরা সবাই কপালে উল্কির মত কালাে কালাে রেখা আঁকতেন। এটা এখানকার এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ঘুরে ঘুরে এসব দেখছিলাম। ডারিংবাড়ির চারপাশে অল্প দূরত্বের ঘুরে বেড়ানাের জায়গাগুলাে হল, নেচার পার্ক ও বাটারফ্লাই পার্ক।১২ কিমি দূরের ডারিংবাড়ির ঝরণা, ১৭ কিমি দূরের কিরিকুটি গ্রামে ইমু পাখির ফার্ম ও কিরিকুটি নদীর ধারের অপূর্ব লাভার্স পয়েন্ট। মাত্র ৪ কিমি দূরে কন্ধ উপজাতির গ্রাম পাট্টোরি। এই গ্রামে একটি চার্চ চোখে পড়ল। আর সবার বাড়িতেই প্রচুর গরু মােষ ছাগল দেখলাম। মাঠে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ও হলুদ। হলুদ চাষ এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল। গ্রীনবাড়িকে সাইলেন্ট ভ্যালি আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সত্যিই বড় অপূর্ব নির্জন সবুজ সুন্দর এই গ্রীনবাড়ি উপত্যকা। আমার সেরা জায়গা মনে হয়েছে গ্রীন বাড়ি ভ্যালিকে। এখানে এসে চুপটি করে বসে থাকা যায়। নিসর্গকে দুচোখ ভরে দেখা যায়। | ডারিংবাড়ির চারপাশে শাল, মহুল, সেগুন, পিয়া-শাল আকাশিয়া, অরক্ষো, সলপ গাছ দেখলাম প্রচুর। আর গৃহস্থ বাড়ির উঠোন বাগানে রয়েছে আম, জাম, পেঁপে, কুমড়াে, লাউ, কাঁঠাল গাছ অনেক। এক একটা পেঁপে দেখে অবাক হয়েছি, লাউয়ের চেয়েও বড়। বিশাল সব পেঁপে।।
ডারিংবাড়ির আদিবাসী উপজাতির ৬০শতাংশই খৃষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে। তাই প্রচুর চার্চ চোখে পড়ল। প্রভু যিশুর জন্মদিনে খুব রঙিন হয়ে ওঠে এইসব চার্চ ও জনপদগুলাে।
আমরা হাঁটতে হাঁটতে অল্পদূরের কিলাবাড়ি-কুতুববাড়ি, কফি বাগান দেখে এলাম। এই বাগানে প্রচুর গােলমরিচ ও সিলভার ওক গাছ রয়েছে। বাগানের চৌবাচ্চায় জলে ভাসা এক ছােট্ট কোরালখন্ডকে দেখে ভাল লেগেছে।
এখানে পাখি দেখা যায় হরেক প্রজাতির। গ্রিন বি ইটার, ব্ল্যাক ড্রনগাে, স্কারলেট মিনিভেট, ললাটেন্স সান বার্ড, হাউস লস্প্যারাে, জারডন্স লিফ বার্ড। পাখি দেখার নেশা ও চোখ থাকলে আরও অনেক অনেক পাখিকে এই উপত্যকায় ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। দেখা যায়।
ডারিংবাড়ি থেকে একটু দূরের সুন্দর কিছু ভ্রমণকেন্দ্রগুলাে হল, তপ্তপানি, বৌদ্ধগুম্ফার গ্রাম, জিরাং ও গােপালপুর অন সি।
নীল আকাশ, সবুজ পাহাড়, ঘন গভীর জঙ্গল আর লাল মাটির ডারিংবাড়ি মনকে ছুঁয়ে যায়। ডারিংবাড়ির নির্জনতা, দূষণমুক্ত সুবাতাস আমাদের কাছে বাড়তি প্রাপ্তি। তাই ছােট্ট ছুটির ছােট্ট ভ্রমণে ডারিংবাড়ি অপূর্ব। অনাবিল!.... কিভাবে যাবেন :.হাওড়া থেকে মাদ্রাজ মেল, ভাস্কো অমরাবতী এক্সপ্রেস কিংবা যশবন্তপুর এক্সপ্রেসে চেপে নামতে হবে বেরহামপুর/ব্রহ্মপুর। সেখান থেকে সড়কপথে ১২০ কিমি।
0 Comments