One of the attractions of North Bengal near the house is Latpanchar. The colorful birds are sitting in the latpancher to match their form in this mild winter. The attraction of such a place near the house to bird lovers is therefore irresistible. Birdwatchers from all over India flock here every year. Latpanchar, the sixth village in the Himalayas. On the way from Siliguri to Sikkim, the village can be reached by climbing Sebak Road, 30 km from Chalekalijhera and 11 km by ascent.

ঘরের কাছে উত্তরবঙ্গের এক আকর্ষনের জায়গা লাটপাঞ্চার। রং-বেরং-এর পাখিরা এই হালকা শীতে তাদের রূপ মেলে বসে আছে লাটপাঞ্চারে। পাখি প্রেমীদের কাছে ঘরের কাছে এমন জায়গার আকর্ষণ তাই দুর্নিবার। প্রতি বছর সারা ভারতবর্ষ থেকে এখানে ভিড় জমান পাখিপ্রেমীরা। হিমালয়ের কোলে ছােট্ট গ্রাম লাটপাঞ্চার। শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যাওয়ার পথে সেবক রােডে ৩০ কিমি চলেকালিঝােরা থেকে ১১ কিমি চড়াইরাস্তায় ওঠার পর পৌঁছে যাওয়া যায় এই গ্রামে। নিস্তব্ধতা যে কত শ্রুতিমধুর হতে পারে সেটা অনুভব করতে গেলে আসতে হবে দার্জিলিং জেলার এই ছােট্ট জনপদটিতে। গ্রামে ঢােকার পরেই যে জিনিসটি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেটি হল এই জনপদের বাসিন্দাদের রুচিবােধ এবং সৌন্দর্যসচেতনতা। প্রতিটি বাড়ির সামনে ফুলের টব। তাতে নানা রং-এর ফুলের মেলা। গ্রামের প্রতিটি বাসিন্দা অতিথিবৎসল এবং শান্তিপ্রিয়। পাখিরাও বােধহয় এইরকম শান্তিধাম পেয়ে এখানেই বাসা বাধে সারাবছর।

প্রকৃতি তথা পাখিপ্রেমীদের কাছে এই জায়গা যে অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে সেটি আন্দাজ করতে পেরেছিলেন স্থানীয় শিক্ষক পদম গুরুং। তাই তিনি নিজের বাড়িতেই হােম স্টে তৈরি করেন। পদমজি নিজে একজন প্রকৃতিপ্রেমী। লাটপাঞ্চার মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির সর্বোচ্চ অংশ। তাই উদ্ভিদজগত আর জীবজগতের এমন বৈচিত্র চোখে পড়ে এখানে। এখানকার গড় উচ্চতা ৪২০০ ফুট। শুধুমাত্র পাখিই নয়। জঙ্গলে পায়ে পায়ে হেটে দেখা মিলতে পারে হরিণ, ওয়াইল্ড বাের, এমনকী কপালে থাকলে হাতি এবং লেপার্ড-ও। লাটপাঞ্চারে উদ্ভিদজগতের মধ্যে প্রধান সিনকোনা গাছ। ইংরেজ আমল থেকেই এখানে সিনকোনা চাষ এবং ম্যালেরিয়া রােগের ওষুধ তৈরির কাজ চলছে। শাল সেগুন পাইন আর সিনকোনা গাছের মধ্যে দিয়ে পায়ে পায়ে হেটে বেড়ানাের অনুভূতি সত্যি বর্ণনার অতীত। লাটপাঞ্চারেরর অগুন্তি পাখিদের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের উডপেকার্স, মিনিভেট, থ্রাশ, শ্ৰাইক, বুলবুল, ঈগল, ম্যাগপাই, ড্রংগাে ইত্যাদি। রয়েছে আরও নাম না জানা পাখিদের ভিড়। কিন্তু এই অঞ্চলের মূল আকর্ষণ হর্নবিল বা ধনেশ পাখি। তবে সঠিকভাবে পাখি দেখতে গেলে একজন গাইড অবশ্যই দরকার। পরাগ নামে একটি ছেলে এই বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ। সেই আমাদের গাইড হিসেবে পরিচয় করালাে লাটপাঞ্চার-এর পাখিদের সাথে। লাটপাঞ্চারে পাখি দর্শনের জন্য মূলত ২টি দিকে যাওয়া যেতে পারে। 

একটি হল নার্সারির পথে। অন্যটি হল মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারির কোর এরিয়াতে। নার্সারির পথে পায়ে হেঁটে যাওয়া যেতে পারে ৩ কিমি। পথে গাছের দিকে নজর রাখলে চোখে পড়বে হরেকরকম পাখি। তবে অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য আদর্শ হল মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি। হাঁটা পথে ৫কিমি চলার পরে স্যাংচুয়ারির মূল অংশে পৌঁছে যাওয়া যাবে। এই অংশটি জিপেও যাওয়া যেতে পারে। তবে পাখি ও পশুপ্রেমীদের জন্য উচিত হবে পায়ে হেঁটে জঙ্গল ভ্রমণের আনন্দ উপভােগ করা। লাটপাঞ্চারে দু’দিন কাটিয়ে আমরা পৌঁছে গেলাম ৫কিমি দূরে এবং আরও খানিক উঁচুতে অহলদাড়াতে। বহুলপরিচিত পর্যটন স্থানগুলির তুলনায় এই অহলদাড়ার সৌন্দর্য কোনও অংশে কম নয়। উচ্চতা প্রায় ৬০০০ ফুট। এখানে পৌছে যে অপরূপ দৃশ্য চোখে পড়ে তাও অসাধারণ। ৩৬০ ডিগ্রি উন্মুক্ত সুবিশাল হিমালয় এখানে দৃ নীচের দিকে তাকালে দেখা যায় তিস্তানদীর আঁকাবাঁকা গতিপথ। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা। দূর নীল পাহাড়ের স্তরগুলি সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সােনালী রং-এ ভরে ওঠে। চারিদিকে বিশাল পর্বতরাশির মধ্যে নিজের অস্তিত্বটাই যেন মূলহীন বলে মনে হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘার সবকটি শৃঙ্গ এখান থেকে দৃশ্যমান। অহলদাড়াতে থাকার ব্যবস্থা বলতে ৩টি কটেজ। এগুলিও পদমজির সৃষ্টি। জনমানবহীন এই অঞ্চলে তিনি পর্যটকদের জন্য সবরকম সুব্যবস্থা করেছেন। শহুরে কোলাহল থেকে যারা ২দিনের বিশ্রাম চান আবার জনপ্রিয় পর্যটক কেন্দ্রের ভিড় এইড়য়ে চলতে চান, তাদের জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে এই অহলদাড়া। পায়ে পায়ে একটু নীচে নেমে দেখা যেতে পারে প্রকৃতির অদ্ভুত খেয়ালে সৃষ্টি পাহাড়ের অদ্ভুত গঠন। যা কিনা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুখাবয়ব এর মতাে। একে স্থানীয়রা ‘টেগাের’স নােজ’ নাম দিয়েছেন। চারিদিকে রয়েছে চা বাগান আর সিনকোনা গাছের বন। 

রাতের বেলা গা ছমছমে অন্ধকারে কটেজে বসে সত্যি এক আদিভৌতিক অনুভূতি হয়। আমাদের রাজ্যে পর্যটনের সঠিক বিপণনের অভাবে এইরকমভাবে সম্ভাবনাময় জায়গা অবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপােষকতা থাকলে এই জায়গা একটি অতি জনপ্রিয় ফ্যামিলি ট্যুরিজম-এর জায়গা হয়ে উঠতে পারে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। অহলদাড়া থেকে অথবা লাটপাঞ্চার থেকে অহলদাড়া যাওয়ার পথে দেখে নেওয়া যেতে পারে নামথিং লেক। লেক-এর একদিক ভােলা। কিন্তু অ্যাদিক পাইন বনে ঘেরা। বর্ষাকালে এই লেক জলে টইটম্বুর থাকলেও অন্যসময় শুকনাে। এখানে দেখা মিলতে পারে বিরল প্রজাতির হিমালয়ান স্যালামান্ডারের। এটি একটি গিরগিটি সদৃশ্য প্রাণী। অহলদাড়ার অন্যতম আকর্ষণ কমলা বাগান। সিতং অরেঞ্জ অরচার্ড ঘুরে আসা যেতে পারে অহলদাড়া থেকেই। অত্যন্ত মনােরম এখানকার পরিবেশ এবং সুন্দর এই কমলা বাগানগুলি। 

বাগান মালিকের অনুমতি ছাড়া কমলাগুলি তােলার চেষ্টা না করাই ভাল। যদিও অনুমতি সাপেক্ষে ২-১টি কমলা নেওয়া যেতে পারে। অতিথিবৎসল এই মানুষগুলি তাতে আপত্তি করেন না। অহলদাড়া এবং লাটপাঞ্চার ভ্রমণের সবচাইতে আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস। যদিও ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে যায় এই শান্ত পাহাড়ি নির্জন গ্রামটিতে। লাটপাঞ্চার এবং অহলদাড়া একসাথে ভ্রমণের সুবিধা এইটাই যে একসাথে পশুপাখিদের সম্পর্কে আগ্রহী মানুষদের যেমন ভাল লাগবে তেমনি হিমালয়ের কোলে কটা দিন ছুটি কাটিয়ে যারা আসতে চান, তাদের কাছেও ভাল লাগবে এই ছােট্ট ভ্রমণটি। 

কিভাবে যাবেন :. দার্জিলিং মেল, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, পদাতিক এক্সপ্রেস বা অন্য যে কোনও ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে গাড়ি ভাড়া করে সেবক রােড দিয়ে কালিঝােরা থেকে বাঁদিকে ১১ কিমি চড়াই পথে গেলেই মিলবে লাটপাঞ্চার। 

সৌরভ সমাদ্দার