Kutch is a region of Gujarat. Kutch run is one of the natural variations of the world.

কচ্ছ গুজরাটের একটি অঞ্চল। কচ্ছের রান পৃথিবির অন্যতম প্রাকৃতিক বৈচিত্র। চাদের আলােয় সাদা ধবধবে আকাশের সামিয়ানা, পায়ে নিচে সাদা বালি নাকি লবন। এক অপার্থিব দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করেদিল। অবাক হয়ে তাকিয়ে লাগলাম প্রকৃতির এই অদভুত সাদা রং।

আমেদাবাদ থেকে ভুজের দূরত্ব ৩৯৬ কিমি এবং সেখান থেকে কচ্ছের দূরত্ব ৮০ কিমি। এতদিন কচ্ছের কথা পড়েছি এবং শুনেছি, তাই মনে মনে একটা ধারনা তৈরি করেছিলাম। সেই সঙ্গে ছিল উত্তেজনা। গাড়ি দ্রুত এগিয়ে চলল। প্রায় ২৫০ কিমি পথ অতিক্রম করার পর চা-পানের বিরতি। রাস্তায় ধারে একটা বেশ বড় মাপের চা দোকান। যাত্রীদের জন্য সমস্তরকমের সুবিধা সেখানে বিদ্যমান। সেখানেই চা খাওয়া হল এবং কিছুটা বিশ্রাম নেওয়ার পর আবার চলা শুরু। সম্ভবত লবন তৈরির কারখানার পাশ দিয়ে চলেছি। কারণ যতদূর চোখ যায়, বিখ্যাত এক সংস্থার লবন প্রস্তুত করার প্রক্রিয়া চলছে। সঙ্গের পথপ্রদর্শক যা জানালেন লবন তৈরি বেশ বেশ কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া। মনে পড়ে গেল মহাত্মাগান্ধীর ডান্ডি অভিযানের কথা। গুজরাট ভারতের একদম পশ্চিম প্রান্তে তাই এখানে সূর্যিমামা দেরিতে অস্ত যায়। চলন্ত গাড়িতে তার অস্তগামী রূপ দেখতে দেখতে চললাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই অন্ধকার নামে। গাড়ি থামে রাস্তার ধারে সন্ধ্যা-চা পানের বিরতি। অবশেষে আমরা পৌছে গেলাম কচ্ছের জেলা সদর শহর ভুজ। ভুজ একটি আধুনির শহর রেল যােগাযােগ রয়েছে। তবে আমাদের গন্তব্য কচ্ছ এখান থেকে ৮০ কিমি পথ।

কচ্ছের ২কিমি দূর থেকে বােঝা যাচ্ছিল আমরা গন্তব্যের কাছে পৌঁছে গিয়েছি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। আমরা পৌছলাম ধােরজে। সেখানে আমাদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা। অভ্যর্থনা জানালেন ‘হােয়াইট রান রিসর্টের জেনারেল ম্যানেজার মিঃ মুখার্জি। অমায়িক ভদ্রলােক। যাঁর কাছে কোনও সমস্যাই সমস্যা নয়। আমাদের জন্যই ক্যানটিন খােলা। একানকার অন্য আবাসিকরা রাতের আহার পর্ব শেষ করেছেন। কিন্তু মুখার্জিবাবু সকলকে ফ্রেশ হয়ে খেতে আসতে বললেন। থাকার ব্যবস্থা টেন্টে তাই দ্রুত টেন্টএর দখল নিলাম আমরা। এমনিতে আমরা তাে টেন্টে থাকতে অভ্যস্ত নই। আমাদের কাছেও অবাক করা ব্যবস্থাপনা। সমস্ত রকমের আধুনিক সুবিধাসহ টেন্ট। কি নেই এতে। এ. সি. থেকে শুরু করে মহিলাদের প্রসাধনের পৃথক ব্যবস্থা পর্যন্ত।

দুই ধরনের টেন্টে থাকার ব্যবস্থা। চারকোণা টেন্ট আর গােলার আকৃতির ডুঙ্গা। ডুঙ্গা আমাদের পরিচিত ধানের গােলার মতাে। স্থানীয় শিল্পের নিদর্শন ডুঙ্গার গায়ে। এই রিসর্টে চারিদিকে লবনের চাদরের সমভূমি, তার উপর সবুজ গালিচা দিয়ে মােড়া রিসর্টের প্রাঙ্গনটুকু। মাঝে প্রমাণ মাপের মঞ্চ বাধা যেখানে প্রতি দিন সন্ধ্যায় স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গীত সন্ধ্যার আয়ােজন করা হয়। এখানেই হয় ডেজার্ট ফেস্টিভ্যাল যা প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে পরের বছর ফেব্রুয়ারির শেষদিন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় সমগ্র গুজরাটের লােকসঙ্গীত শিল্পীরা, হস্তশিল্প শিল্পীরা এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে।

রাত্রে খাবার পরে সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে সকলে পূর্ণিমা রাত্রে মুন লাইটে বিস্তীর্ণ ডেজার্টে যেতে চান। বি এস এফের-এর বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষ। রিসর্ট থেকে পাঁচ কিমি দূরে সকলে যাত্রা শুরু করলাম। তবে বাস নয় সাইকেলে। প্রসঙ্গত বলি ওখানে সাইকেল ভাড়া করে ঘােরা যায়। যদিও অতিথি হিসাবে সাইকেল ভাড়া আমাদের দিতে হয়নি। কেবলমাত্র অনুমতিপত্র নিতে হয়েছে। ফটো আইডি দিয়ে। চাঁদের জোয়ারে যেন ভাসমান লবন সাগর। অসাধারণ যা আমার পক্ষে ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। রাত প্রায় দুটো নাগাদ যে যার টেন্টে প্রবেশ করলাম। পরদিন আমাদের গন্তব্য ৩০ কিমি দূরে কালী দুঙ্গার। কালাদুঙ্গার বিখ্যাত তার দত্তরাওতরায়া মন্দির।

এবার আমাদের রিসর্টে ফেরার পালা। আমাদের ফ্রেন্ড-ফিলােসফার এবং গাইড গুজরাট ট্যুরিজমের বাপ্পাদিত্য রায় জানালেন রনের লালুজীর টেন্টে আমন্ত্রণ। ফলে গাড়ি থামল হােয়াইট রেন্টে। আয়তন প্রথমটির থেকেও বড়। রিসর্টের ভিতর ঘােরার জন্য ব্যাটারী চালিত গাড়ির ব্যবস্থা আছে। এখানে এছাড়াও আছে হস্তশিল্প বিপন্ন কেন্দ্র। সন্ধ্যায় আবার চললাম রনের ডেজার্টে সানসেট দেখতে। সাদা লবনের চাদরের মধ্যে সূর্যাস্ত সঙ্গে সঙ্গে বিপরীত দিকের চন্দ্রোদয়। এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

সুশােভন বন্দ্যোপাধ্যায়