The western coast of India touches the long coastline. The coast from Kanyakumarika to Gaia along the northern coastline is called the Malabar Coast.
ভারতের পশ্চিমদিকের সমুদ্র ছুঁয়ে আছে সুদীর্ঘ উপকূলভূমি। কন্যাকুমারিকা থেকে উত্তরে তটরেখা বরাবর গােয়া পর্যন্ত উপকূলকে বলা হয় মালাবার উপকূল। এই মালাবার উপকূল কিন্তু একটি রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, গােয়া, কর্নাটক, কেরালার মধ্যে দিয়ে এই তটরেখার ব্যাপ্তি। উত্তর থেকে দক্ষিণে সেই তটরেখা ধরে কারওয়ার, গােকর্ন, ওমবিচ, উদিপি, মালপে, মুরুদ্দেশ্বর হয়ে ম্যাঙ্গালাের। এই হল এবারে আমাদের পর্যটন পথ। এ পথে অবশ্য একবারই তটরেখা থেকে দূরে সরে যােগ প্রপাত দেখার ইচ্ছে আছে।
বাদামী থেকে আমরা ব্রেকফাস্ট সেরেই যাত্রা করেছি। লম্বা পথ যেতে হবে দূরত্ব ২৬৯ কিমি (কারওয়ার) প্রায় ৭/৮ ঘণ্টার পথ। যাত্রাপথেই এক হােটেলে দুপুরের খাওয়া সেরে বিকেলের দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম কর্ণাটকের কারােয়ার। উত্তর কন্নড় জেলার সদর ও সীমান্ত শহর এই কারােয়ার। কারােয়ার থেকে গােয়া মাত্র ৫০ কিমি। ভারতীয় নৌবাহিনীর এক গুরুত্বপূর্ণ পােতাশ্রয় এই কারােয়ার। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও রয়েছে এই শহরের। ইবন বতুতা, ভাস্কো ডা গামা এসেছিলেন এই শহরে। এক সময় ব্রিটিশ ও পর্তুগিজদের উপনিবেশ ছিল এই শহর। শহর ঘিরে রেখেছে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা আর শহরের প্রধান আকর্ষণ অবশ্যই সমুদ্র অর্থাৎ আরবসাগর।।
বেলা এখনও রয়েছে তাই সরাসরি হােটেলে না গিয়ে গাড়ি এসে থামে সাগরবেলার তীরে। শহরে ঢুকেই এই সৈকত। নাম টেগাের বিচ। রবীন্দ্রনাথ অল্প বয়সে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন এই শহরে। মাত্র ২২ বছর বয়সে তার প্রথম নাটক প্রকৃতির প্রতিশােধ লিখেছিলেন এই কারােয়ারের সাগরপাড়ে বসে। এখানের মানুষ তাই সে কথা মনে রেখে এই সৈকতের নাম রেখেছে টেগাের বিচ। রবি ঠাকুরের স্মৃতিধন্য এই শহরে নিরালা বেলাভূমি সারি বাঁধা ঝাউবন আর দুরে সমুদ্রের বুকে বিশাল পাথুরে টিলা দেখে বেশ ভাল লেগে গেল। লম্বা সৈকতে আমরা যে অংশে নেমেছি সেখানে সৈকত বেশ খাড়া ঢালে সমুদ্রে মিশেছে। বিচ বেশ পরিপাটি করে সাজানাে, সামনেই রয়েছে ওয়ারশিপ মিউজিয়াম। ওয়ারশিপ মিউজিয়াম হল আসলে একটি যুদ্ধ জাহাজ। তার ভিতরে যন্ত্রপাতি, কর্মপদ্ধতি দেখানাের ব্যবস্থা রয়েছে। যুদ্ধজাহাজের একটি ছােট্ট ঘরে যুদ্ধ জাহাজ তার ভিতরে যন্ত্রপাতি, কর্মপদ্ধতি দেখানাের ব্যবস্থা রয়েছে। যুদ্ধ জাহাজের একটি ছােট্ট ঘরে যুদ্ধ জাহাজ সম্পর্কিত ফিল্ম শাে দেখানাের ব্যবস্থাও রয়েছে। জাহাজের সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঘুরে ঘুরে আমরা সেইসব দেখলাম। এই মিউজিয়াম দেখে যেন ভাইজ্যাকের সাবমেরিন মিউজিয়ামের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই ওয়ারশিপ মিউজিয়াম সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা আবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত খােলা থাকে। সমুদ্রের জলে সূর্য ডুব দিচ্ছে। কারােয়ারের সমুদ্রে রক্তিম সােনালি রঙের ঝলকানি দেখতে দেখতে আমরা ফেরার পথ ধরি। আজকে রাত্রিবাস কারােয়ারের প্রিমিয়ার রেসিডেন্সি হােটেল।
পরদিন সকালে আবার কারােয়ারের সৈকতে। গতকাল সমুদ্রের স্পর্শ নেওয়া হয়নি, আজকে সমুদ্রের সঙ্গে একটু ছোঁয়াছুঁয়ি। নীলচে সবুজ আরব সাগরের ঢেউ ঝাঁপিয়ে পড়ছে সােনালী বালুকা তটে। প্রেক্ষাপটে ছােট বড় টিলা সবুজ জঙ্গল যেন সমুদ্রের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। সমুদ্র সৈকত থেকে এবার চলি কালী নদীর সঙ্গে দেখা করতে। প্রায় ৩ কিমি দূরে কালীনদী মিশেছে সমুদ্রে। বিশাল এক সেতু কালীনদীর ওপর। সেতুর ওপর গাড়ি দাঁড়াতে দেবে না, তাই গাড়ি একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল। মােহনার দিকটা ভীষণ সুন্দর। নারকেল আর ঝাউ গাছ ঝুঁকে পড়েছে সমুদ্রের বুকে। শান্ত সমুদ্রের বুকে মাঝে মাঝে জেগে উঠেছে ছােট ছােট দ্বীপ। দূরে বড় বড় জাহাজ নােঙর ফেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কালীনদীর সেতু পেরিয়ে হায়দার আলির দরগা। কালী নদী আর আরব সাগরের সঙ্গম থেকে বােট নিয়ে যাওয়া যায় অনন্য সুন্দর এক দ্বীপে নাম দেববাগ দ্বীপ। সােনালি বালির সৈকত। ঝাউ আর কাজু বাগানের গাছে ঘেরা আর নারকেল গাছ তাে তার প্রধান অলংকার। এখানে স্নারকেলিং সহ অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার স্পাের্টসের ব্যবস্থা আছে। কারােয়ার শহরের মধ্যে অষ্টকোনাকৃতি গির্জা খুঁজে পেতে অনেক গলিঘুজি ঘুরতে হল। রাস্তা থেকে অনেকগুলি সিঁড়ি ভেঙে পৌঁছতে হয় গির্জার অন্দরে। ভিতরে এক সুন্দর শান্তিময় পরিবেশে প্রার্থনা চলছে।
0 Comments