ব্রিটিশ সাহিত্যিক রুডইয়ার্ড কিপলিং-এর পৃথিবীখ্যাত ‘জাঙ্গল বুক’ কাহিনি কানহার জঙ্গলকে কেন্দ্র করে।
মধ্যপ্রদেশের পূর্বদিকে বিশাল পর্বতশ্রেণীর গা ঘেঁষে ১,৯৪৫ বর্গ কি.মি. জুড়ে বিস্তৃত অঞ্চলটি ১৯৫৫ সালে জাতীয় উদ্যানের শিরােপা পায়। ভারতে চালু হওয়ার প্রথমদিকেই প্রখ্যাত জুওলজিস্ট জর্জ স্কেলারের ব্যাঘ্র পাঠাগার’ এই জঙ্গলটিকে তার আওতায় আনা হয়। কানহা বানজার ভ্যালি প্রজেক্ট’-এর অন্তর্গত। শাল, সেগুন, মহুয়া, হরিতকী, বয়ড়া, বাঁশ আর ঘাসের বিস্তীর্ণ বনভূমির রাস্তা পাহাড়ের ওপর ‘বামিনী দাদার’ পর্যন্ত বিস্তৃত। সেখানেই কানহার সর্বোচ্চ বিন্দু। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্যের জন্য স্থানটি বিখ্যাত। হাল্লোন ও বানজার অভয়ারণ্যের মিলিত রূপ কানহা বনাঞ্চল অশ্বক্ষুরাকৃতি। জীপে বা হাতির পিঠে বনে ঢুকতে হলে গাই বাধ্যতামূলক। তবেই হদিশ পাওয়া যাবে অরণ্যচারীদের ঠিকানার। গ্রীষ্মের কানহা বন্যজন্তু দেখার পক্ষে শ্রেষ্ঠ। প্রধানত শিঙের বারােটি আগা বিশিষ্ট দুষ্প্রাপ্য বারশিঙ্গা হরিণের জন্য কানহা বিখ্যাত। এদের সংখ্যা প্রায় ৪৫০। চিতল, চৌশিঙ্গা, চিঙ্কারা, গউর, বনশুয়াের, নীলগাই, বন্যককুর, চিতাবাঘ, বনবেড়াল, বাঘ, শ্লথ ভল্লুক, বেজী, শেয়াল, বুনাে খরগােস, হনুমান, কৃষ্ণসার, সম্বর, কাঁকার ইত্যাদি অজস্র প্রাণী কানহার জঙ্গলে। কানহার সংরক্ষণ ব্যবস্থা খুব সুসংহত। গবাদি পশুচারণ এখানে নিষিদ্ধ। জঙ্গলের ভেতর মাংসাশী ও তৃণভােজী প্রাণীদের জন্য আলাদা সুন্দর ব্যবস্থা আছে। বন্যপশু ছাড়াও হরেক ধরনের পাখির সংখ্যা কানহায় কম নয়। বুলবুলি, দোয়েল, খঞ্জন, বেনেবউ, হলুদ বসন্ত, বসন্তবৌরী, কোকিল, হাঁড়িচাচা, ফিঙে, টিয়া, মাছরাঙা, কেশরাজ, দুধরাজ, ময়ূর, বনমুরগী, তিতির, বটের, পিপিট, কাঠঠোকরা প্রভৃতি ও নানা জাতের যাযাবর হাঁসের আড্ডাখানা কানহা বন ও বনমধ্যস্থিত জলশায় ‘শ্ৰবণতাল। কানহার বনে সকালে সূর্যোদয়ের পর ঘন্টাখানেক ও বিকেলে সূর্যাস্তের আগে ঘন্টাখানেক সময় বন্যপ্রাণী দেখার পক্ষে শ্রেষ্ঠ। তবে ‘টাইগার-শাে’ হয় সকালে। দর্শনী মাথাপিছু ১০০ টাকা। হাতি-সওয়ারী হলে সবচেয়ে ভাল হয়। তা না হলে জীপের সাহায্যও নেওয়া যায়। ১ জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত জঙ্গল বন্ধ থাকে। মার্চ-জুলাই হল বন্যপ্রাণী দেখার সেরা সময়। কীভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে মুম্বাই মেলে জলপুর পৌঁছে, সেখান থেকে সকাল ৮টায় মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের বাসে (সীট প্রতি ২৫০/-, টিকিট পাওয়া যায় স্টেশনে, এম.পি. ট্যুরিজমের অফিসে) কিসলি পৌঁছতে পারেন। কিসলি কানহার একটি প্রবোর। এছাড়া মুম্বাই মেলে (ভায়া নাগপুর) বিলাসপুর গিয়ে, সেখান থেকে বাসে উদ্যানের অপর প্রবেদ্বার মুক্তিতে যেতে পারেন। কোথায় থাকবেন :.জাতীয় অরণ্যের শুরু খাটিয়াতে। এখানে সাধারণ মানের কয়েকটি প্রাইভেট হােটেল আছে। খাওয়ার হােটেলও আছে। কিসলিতে আছে বাঘিরা রিসর্ট, বাইসন রিসর্ট, মুঙ্গিলী রিসর্ট, ফোন : ০৯৮৩০১৫২১৬৯। প্যানথার রিসর্ট, ফোন :. ০৭৬৪২ ২৭৭২২৩০/ ২৭৭২২৩১। যােগাযােগ করুন, ফিল্ড ডিরেক্টার, কানহা ন্যাশানাল পার্ক, মানডিল, মধ্যপ্রদেশ, পিন৪৮১৬৬১। ফোন : ০৭৬৪২-৫০৭৬০।
0 Comments