You have to take a bus to Badrinath from Haridwar or Hrishikesh in Uttarakhand, an ancient cave temple in the foothills of Megh Megh hill, just before Jashimath. Touching the foot of the mountain, the murmur is flowing. The name of the river is Kalpaganga. In his tender chest, a long-bodied fountain leaped with unbridled joy. Snowy smiles in the blue sky. Megh Raed's hideout across the green valley. Shiva's abode in the cave temple is Kalpeshwar of  Panchkedar.

মেঘ মেঘ পাহাড়ের ভাজে প্রাচীন এক গুহামন্দির উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বার বা হৃষিকেশ থেকে বদ্রিনাথের বাসে চড়ে নামতে হবে যােশীমঠের খানিক আগে।। পাহাড়ের পা ছুঁয়ে কলকল শব্দে বয়ে চলেছে। নদীর নামটি ভারী সুন্দর কল্পগঙ্গা। তার কোমল বুকে উদ্দাম উল্লাসে ঝাপিয়ে পড়েছে বাঁধনহারা দীর্ঘদেহী ঝর্ণা। নীল আকাশে তুষার শৃঙ্গের মুচকি হাসি। শ্যামল উপত্যকা জুড়ে মেঘ রােদের লুকোচুরি। গুহা মন্দিরে শিবের বাস তিনি হলেন পঞ্চকেদার কল্পেশ্বর। এখানে তিনি কল্পতরু হয়ে ভক্তের সব মনােবাঞ্ছা পুরণ করেন। পুরাকালে দুর্বাসামুনির অভিশাপে দেবরাজ ইন্দ্র শ্রীহীন হলে এখানে বসে কল্পেশ্বর মহাদেবের তপস্যা করে তার পূর্বরূপ ফিরে পান। ও কল্পতরু লাভ করেন। এই পুণ্যস্থানটি কল্পকেদার নামেও পরিচিত। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর আত্মীয় বধের পাপস্খলনের জন্য পান্ডবরা হিমালয়ে এসে শিবের তপস্যা করেন। মহাদেব মহিষরূপ ধারণ করে ছলনা করেন তাদের সঙ্গে। পান্ডবরা কিছুতেই তার ধরাছোঁয়া পান না। অবশেষে মধ্যম পান্ডব ভীম মহিষরূপী মহাদেবকে শনাক্ত করে পিছন থেকে জাপ্টে ধরেন। পালাতে গিয়ে শিবের একেক অঙ্গ খসে পড়ে হিমালয়ের একেক পাহাড়ে। কেদারনাথে পশ্চাদ্ভাগ, মদমহেস্বরে নাভি, তুঙ্গনাথে বাহু, রুদ্রনাথে মুখ ও কল্পেশ্বরে জটা। ওই পাঁচটি স্থানে পান্ডবরা মন্দির গড়ে পূজো শুরু করেন। স্থানগুলি পঞ্চকেদার নামে পরিচিত হয়। পাঁচটি কেদারেরই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভীষণ মনােরম। এবং প্রতিটাতেই হেঁটে পৌছতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজে পৌছনাে যায় কল্পেশ্বরে। কোনও চড়াই উত্রাই নেই। হাঁটাপথও অল্প। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ও নেই। তাই কোনও গাইডের প্রয়ােজনও নেই।।
হরিদ্বার বা হৃষিকেশ থেকে বদ্রিনাথের বাসে চড়ে নামতে হবে যােশীমঠের খানিক আগে। কিছুকাল আগেও তীর্থযাত্রীদের হাঁটতে হত হেলং থেকে। চড়াই ভেঙে কল্পেশ্বর পৌছুতে লেগে যেত আস্ত একটা দিন। দিনকাল বদলেছে। এখন হেলাং শেয়ার জীপ পৌছে দেয় উর্গম পর্যন্ত। কল্পগঙ্গার সেতু পেরিয়ে উর্গম যেতে সময় লাগে ঘণ্টা খানেক। তারপর আর মাত্র তিন কিলােমিটার হাঁটা পথ। | উর্গম (২০২০মি) আসলে কোনও বিশেষ গ্রামের নাম নয়। সালনা, লিয়ারি, মাল্লা, বরগিন্দা, দেবগ্রাম, গিরা ও বাসা এই সাতটি গ্রাম নিয়ে উর্গমক্ষেত্র। প্রাচীনকালে ঊর্ব ঋষির সাধনক্ষেত্র ছিল এই অঞ্চল। তার নামেই জায়গার নাম উর্গম। বাসা গ্রামে তাঁর সাধনস্থলে মন্দির আছে। পাহাড়ের গায়ে কাঠ আর পাথরের ঘরবাড়ি। লাগােয়া শস্যক্ষেত, ফলের বাগান, নীচে দিয়ে আপন খেয়ালে বয়ে চলেছে গঙ্গা। ধাপে ধাপে চাষের জমি নেমে গেছে নদীর কিনারায়। উর্গম ভীষণ উর্বরক্ষেত্র। প্রতিটা ঘর শস্য ও ফলে ভরা। ফল ও সজি ফলিয়ে গ্রামবাসীরা বেশ কয়েকবার নাকি রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারও পেয়েছেন। নিজের জমি থাকুক বা না থাকুক, তারা যৌথভাবে চাষাবাদ করে। গ্রামে পা দিলেই দেখা যাবে পাকা গমের সােনালী আলােয় উর্গম পীতাভ। আলু আর রাজদানার ক্ষেত। তারই মাঝে পথ চলা। বাতাসে পাকা ফসলের ফুরফুরে গন্ধ। ওপারের ধূসর নীল পাহাড়ের গায়ে যুথবদ্ধ অরণ্য।
দেখতে দেখতে এসে যাবে উর্গম। পথের বাঁ দিকে একটু উপরে সপ্তবদ্রির অন্যতম ধ্যানবদ্রি মন্দির। পাথরের তৈরি মন্দিরটি মনে করা হয় বিশ্বকর্মার সৃষ্টি। ভিতরে ধ্যানরত বিষ্ণমূর্তি। সঙ্গে লক্ষ্মীদেবী, গণেশ, ঘণ্টাকর্ণ, গড়ুর ও বিশ্বকর্মা। প্রাচীন মন্দির তবে বিশেষ রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। ডিমরি সম্প্রদায়ভুক্ত ব্রাহ্মণরা ধ্যানবদ্রির পূজো করেন। নারায়ণকে প্রণাম সেরে কিছুটা এগােলেই দেবগ্রাম, এক সময় অনেক দেবতাদের বাস ছিল এই গ্রামে। ছােট্ট গ্রাম, আশি পঁচাশি পরিবারের বাসা, এখানে আছে রাজিন্দর সিং। লেগীর ‘পথিক লজ’। অনেকেই এই লজে রাত্রিবাস করেন। ব্যবস্থাও ভাল। কিন্তু এখন যেহেতু মন্দির কমিটির ঘরেই থাকার বন্দোবস্ত হয়েছে তখন কাজ কি এখানে থাকার? মন্দির চত্বরে থাকার এক অন্য মাধুর্য আছে।
এই বার শুরু হবে এক স্বপ্নের পথ। রাস্তা ঝাপ দেবে সবুজের প্রগাঢ় সমতলে। নিশ্ৰুপ নিসর্গ। চারিদিকে নিথর জঙ্গল। কল্পগঙ্গা আলপনা এঁকেছে পথের ধারে। ওপাশের পাহাড়ের ঢাল বেয়ে জঙ্গল নেমে এসেছে ঝর্নার মতাে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের মাথায় বিছানাে সাদা মেঘের ফিনফিনে ওড়নাটা হাওয়ায় উড়তে উড়তে নেমে আসবে নীচে। মাঝে মাঝে সেই ওড়নায় মুখ ঢাকবে চরাচর। দিনশেষের আলাে উঁকি মারবে পাহাড়ের চূড়ায়। নীল অন্ধকার জড়িয়ে ধরবে সবুজকে। চমক ভাঙবে দীর্ঘদেহী এক ঝর্ণার ভয়ার্ত গর্জন শুনে। কল্প গঙ্গার ওপর লােহার সেতুটা পেরিয়ে অরণ্যের গহনে হামা দিয়ে পাহাড়ের টং-এ উঠে যাওয়া পথটা ধরে এগােলেই এসে যাবে কল্পেশ্বর। পথে পড়বে বাঙালীবাবা শ্রী বিজয় চৈতন্য মহারাজের সমাধি। দীর্ঘকাল তিনি তপস্যা ও মন্দিরের দেখভাল করেছেন এই কল্পতীর্থে। শ্রদ্ধেয় উমাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়ের রচনাতেও তার উল্লেখ পাই। কয়েক বছর আগে তিনি দেহ রেখেছেন। মন্দির দেখাশােনার দায়িত্বে আছেন তারই শিষ্য সন্তোষী বাবা। বেনারসের মানুষ। যদিও পূজোর দায়িত্বে আছেন উর্গম গাঁয়ের নন্দা সিংহ কিন্তু সকালবেলা না এলে বাবা পুজোপাঠ করে চলে যান নিজের গাঁয়ে। সারাক্ষণ সন্তোষীবাবার তত্ত্বাবধানেই থাকেন কল্পনাথ। মন্দিরের ঠিক আগেই তার আখড়া। টিনের চালাঘর ভিতরে ধুনি জ্বলছে। পেঁৗছনােমাত্র এক গাল হেসে সাদরে আপ্যায়ন করবেন গেরুয়াবসনধারী মধ্যবয়সী ওই সন্ন্যাসী। বসতে বলে, চায়ের গ্লাস এগিয়ে দেবেন যত্ন করে। কথায় কথায় জানাবেন পঞ্চকেদারের মধ্যে জটারূপী মহাদেবের শুধু এই মন্দিরই ভক্তদের জন্য খােলা থাকে সারা বছর। এমনকী চব্বিশঘণ্টা। যখন খুশি গিয়ে তাকে পুজো করা যায়। মহাদেব এখানে কল্পতরু হয়ে ভক্তের সব ইচ্ছা পূরণ করেন। কথা শুনতে শুনতে দূরে চোখ মেললে দেখা যাবে উর্গম উপত্যকার আল ধরে নিঃশব্দে নেমে এসেছে সন্ধ্যের ছায়া।  চা খাওয়া হলে থাকার ঘর খুলে দেবেন সন্তোষীবাবা। মন্দির লাগােয়া যাত্রীনিবাসটি কিছুদিন আগে তৈরী হয়েছে। প্রয়াত বাঙালী বাবার স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। পাশাপাশি তিনখানা ঘর, সামনে লাল মেঝের বারান্দা। ঘরে গােটা সাতেক চৌকিতে বিছানা বালিশ, লেপ, কম্বল, সবই আছে। বাথরুমটাই শুধু বাইরে। খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্তও সন্ন্যাসীর। তবে কোনও চাহিদা নেই। যে যা দেয়, হাসিমুখে তাই গ্রহণ করেন। ব্যাগপত্র রেখে, পােশাক, বদল করে এবার আসতে হবে মন্দিরে। দেবতার দর্শনে।  ঘণ্টা ঝােলানাে পাথরের তােরণদ্বার পেরিয়ে ডানদিকে পাথরের একটা ওভার হ্যাংয়ের-এর নীচে অসংখ্য সিঁদুর চর্চিত শিবলিঙ্গ। আশপাশে গােটা তিনেক ত্রিশূল রাখা। একটু এগিয়ে মন্দিরের চাতাল, সুবিশাল পাথরের এক ওভার হ্যাংয়ের নীচে নন্দী, চতুর্ভুজ গণেশ, অঙ্কে গৌরীকে নিয়ে বীনাবাদনরত শিব। পাথরের সব চমৎকার চমৎকার মূর্তি অনাদরে অবহেলায় পড়ে আছে দেখে কষ্ট হবে। এবার ছােট্ট দরজা দিয়ে মাথা নীচু করে ঢুকতে হবে মূল গর্ভগৃহে। অপরিসর গুহার মাটি থেকে সামান্য উপরে সিঁদুর মাখা গােলাকার লিঙ্গ দেখতে ঠিক জটার মতােই। মহাদেবের জটার এখানে শিলীভূত লিঙ্গ। দু'পাশে সাদা কাপড়ে মােড়া মাথায় ধুতরাে ফুল, বেলপাতা, ডানদিকে ত্রিশূল ও ফনাতােলা পিতলের সাপ, বাঁয়ে গণেশের মূর্তি। সামনের থালায় ফুল, চন্দন, বেলপাতা রাখা। গুহার ছাদ থেকে ঘণ্টা ঝুলছে। গর্ভগ্রহ জুড়ে ধুপের মিষ্টি সৌরভ। সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণে পূজো চলবে বেশ খানিকক্ষণ ধরে। পুজো অন্তে সন্তোষীবাবা জানালেন, যে ওই লিঙ্গটি নাকি বহুযুগ আগে ছিল কল্প গঙ্গার গর্ভে। ধীরে ধীরে নাকি উপরে উঠেছে। অনেক মহাত্মার সাধনপীঠ এই কল্পেশ্বর শিবরাত্রিতে বিশেষ পুজো হয়। এবার শুরু হবে সন্ধ্যারতি। ধূপের ধোঁয়া দীপের আলােয় সে এক মায়াবী পরিবেশ। কাসরঘণ্টার ধ্বনিতে রাত গাঢ় থেকে গাঢ়তর হবে। বাইরে গা ছমছমে নিচ্ছিদ্র অন্ধকার আকাশে কুয়াশা ভেজা ম্রিয়মান চাঁদ। বাতাসে শঙ্খ, ঘণ্টার শব্দ। মাঝে মাঝে গুরু গুরু মেঘধ্বনি। আকুল পাথার নদী কল্পগঙ্গা কুল কুল গান গেয়ে রাত জাগছে আগামী সূর্যের প্রতীক্ষায়।  কীভাবে যাবেন :. হাওড়া থেকে হরিদ্বার ট্রেনে এসে সেখান থেকে বদ্রিনাথগামী বাসে চেপে নামতে হবে যােশীমঠের আগে হেলাং চটীতে। সেখান থেকে শেয়ার জীপে চলে যাওয়া যাবে উর্গম পর্যন্ত। পুরাে গাড়ি ভাড়া করা যায়। উর্গম লিয়ারী থেকে কল্পেশ্বর হাঁটা পথে মাত্র ৩ কিমি। চমৎকার রাস্তা, কোনও চড়াই উত্রাই নেই। দিব্যি ফ্যামিলি নিয়ে বেড়িয়ে আসা যায় হিমালয়ের এই বিউটি স্পটটিতে। কোথায় থাকবেন :. থাকার জন্য কল্পেশ্বরের ১ কিমি আগে দেবগ্রামে আছে রাজিন্দর সিং নেগীর ‘পথিক লজ’, কল্পেশ্বরে রাত কাটাতে চাইলে থাকতে হবে মন্দির কমিটির ঘরে। দায়িত্বে আছেন বর্তমানে সন্তোষীবাবা। খাওয়ার বন্দোবস্তও তারই। যে যা মূল্য ধরে দেন, হাসিমুখে তাই-ই গ্রহণ করেন সন্ন্যাসী। কোনও চাহিদা নেই। কখন যাবেন . যাওয়া যায় সারা বছরই। তবে বর্ষাকাল (জুলাই-আগস্ট) ও ভীষন শীতে (ডিসেম্বর-জানুয়ারী) না যাওয়াই ভাল। ট্যুর প্ল্যান :.হাওড়া থেকে হরিদ্বার ট্রেন বিশেষে এক থেকে দু’দিন। হরিদ্বার থেকে ভােরের বদ্রিনাথের বাস ধরতে পারলে দিনের শেষে পৌছে যাওয়া যায় কল্পেশ্বর। তবু হাতে একটা দিন বেশী রাখাই ভাল। কল্পেশ্বরে ১/২ দিন কাটাতে ভালই লাগবে।
ডাঃ অর্পণ রায়চৌধুরী