ইতিহাসের ছাত্রী আমি। ইতিহাস আমাকে বরাবরই টানে। তাই এবার ঐতিহাসিক নগরী কোচবিহারে।


অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল কোচবিহার রাজবাড়ি দেখার। সুযােগটা হয়েও গেল, আর চলেও এলাম কোচবিহার। খুব জনবহুল এই শহর। এই শহরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোচ রাজাদের কাহিনী। প্রাসাদ ঘুরব পড়ে, বর্ণনাটা আগে শুনেনি। ইতালী নবজাগরণের আগে ইউরােপীয় স্থাপত্যরীতিতে যে চরম উৎকর্ষতা দেখা দিয়েছিল তারই ভাবদর্শে এই রাজপ্রাসাদটি নির্মিত হয় ১৮৮৭ সালে। নির্মাতা কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ। স্থপতিকার ছিলেন। এক বাফাল। আয়তন ৫৫,০০০ বর্গফুট। রােমের সেন্ট পিটার্স গীর্জার অনুকরণে নির্মিত হয় ১৮৮৭ সালে। নির্মাতা কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ। স্থপতিকার ছিলেন এক বাফাল। আয়তন ৫৫,০০০ বর্গফুট। রােমের সেন্ট পিটার্স গীর্জার অনুকরণে নির্মিত দরবারকক্ষের বিশাল কোরিস্থীয় স্তম্ভের উপরে রয়েছে ধনুকাকৃতি চারটি খিলানের বিস্তৃতি। এই দরবারকক্ষ দিয়েই প্রাসাদের ভিতর প্রবেশ করতে হয়। উপরের গম্বুজটি দ্বাদশ কোণযুক্ত। দরবারকক্ষের অভ্যন্তরে রয়েছে রঙিন মর্মর প্রস্তরে খচিত রাজপ্রতীক। মূল প্রাসাদকে ঘিরে রয়েছে পাকশালা, ভােজনকক্ষ, বিলিয়ার্ড খেলার ঘর, সাজঘর, পুস্তকাগার, উপবেশনকক্ষ, তােষাখানা। অন্দরমহলের দেওয়াল চিত্র অলঙ্করণে সমৃদ্ধ। বর্তমানে রাজপ্রাসাদটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের অধীনে। এদের অধীনেই এখানে গড়ে উঠেছে প্যালেস মিউজিয়াম। শুক্রবার ছাড়া প্রত্যেকদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খােলা থাকে। প্রবেশমূল্য ৫ টাকা। প্রাসাদের ভিতরে ক্যামেরা নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। প্যালেস মিউজিয়ামে কোচ রাজাদের ব্যবহার করা দ্রব্যসামগ্রী দেখতে বেশ ভালই লাগে। পুরাে রাজপ্রাসাদটি ঘুরে দেখতে বেশ অনেকটাই সময় লাগে। এবার আমরা যাব কোচবিহারের অন্যান্য দ্রষ্টব্য স্থানে।।

নাম তার রসিকবিল। নীল আকাশের নীচে জলাধার আর জলাধারকে ঘিরে পরিযায়ী পাখিদের আনাগােনা। কোচবিহার মূল শহর থেকে ৪৫ কিলােমিটার দূরে এই রসিকবিল। এখানে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে স্পর্শ করা যায়। পাঁচটি জলাশয়কে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই কেন্দ্র। এখানে রয়েছে মিনি জু। ওয়াচটাওয়ার থেকে বসে দেখা যায় বিলের প্রাকৃতিক শােভা। রসিকবিল থেকে যখন বেরােলাম, ঘড়িতে তখন বেলা তিনটে। পাশেই একটা হােটেলে সারলাম রাঞ্চপর্ব। আজ রাসপূর্ণিমা। শুধু নদীয়া জেলা না কোচবিহারের মদনমােহন মন্দিরকে কেন্দ্র করেও বসে বিখ্যাত রাস উৎসব। ঠিক সন্ধ্যার মুখে পৌছলাম প্রাচীন মদনমােহন মন্দির প্রাঙ্গণে। কোচরাজাদের কুলদেবতা এই মদনমােহন। মন্দির প্রাঙ্গন জুড়ে রয়েছে রাসলীলার কাহিনী। কাঠের পুতুলের মধ্যে দিয়ে শােনানাে হচ্ছে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। কি নেই সেখানে। কোথাও পুতনা রাক্ষসী কোথাও বা সীতাহরণ, কোথাও আবার দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের কথা সেই ছােটবেলায় ফিরে যাওয়া। দর্শন করলাম মদনমােহন দেবতা। রাসের মেলায় ঘুরে ঘুরে জিলিপি, ফুচকা খেলাম আর শুনলাম ভাওয়াইয়া গান। এটা মেলার প্রধান আকর্ষণ। বলা বাহুল্য মন্দিরের নিরাপত্তা বেশ কঠোর। আকাশে পূর্ণিমার পূর্ণ চাদ। আমরা এলাম বাণেশ্বর শিব মন্দিরে। কিংবদন্তীঘেরা এই মন্দিরে বুড়াে শিব অধিষ্ট দেবতা। কথিত আছে, পৌরাণিক যুগে বানাসুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির। মন্দিরের বিশেষ আকর্ষণ কচ্ছপ সরােবর। বেশ রাত এখন, ঘরে ফেরার পালা। গাড়ি এগিয়ে চলল হােটেলের দিকে। কালকের গন্তব্য অন্য কোথাও। সে না হয় অন্য আর একদিন বলব। আজ এইটুকুই থাক। কীভাবে যাবেন : শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে আলিপুরদুয়ার বা উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস ধরে কোচবিহার। কোথায় থাকবেন : কোচবিহারে থাকার অনেক ব্যবস্থা আছে। হােটেল মহারাজা, হােটেল যুবরাজ, রয়্যাল প্যালেস। আবার যারা ডুয়ার্স ঘুরবেন তারা একদিন হাতে রাখুন কোচবিহার ঘােরার জন্য। সেক্ষেত্রে কোচবিহারে রাত্রি যাপনের প্রয়ােজন নেই।

সঞ্চিতা পাল