Chuikhim is a small village in the Himalayas. The village is known as Healing Village.
চুইখিম হিমালয়ের একটি ছট্টো গ্রাম। গ্রামটি হিলিং গ্রাম হিসাবে পরিচিত। সেবক হয়ে করােনেশন ব্রিজ পার হয়ে কিছুটা এগােতেই বদলে গেল দৃশ্যপট। চওড়া ন্যাশনাল হাইওয়ে চলে গিয়েছে সােজা। দু’পাশে সবুজে সবুজ চা বাগান। সকালের সােনা রােদ আলাে ছড়িয়েছে সেখানে। কিছুদূর এভাবেই যেতে যেতে পৌছলাম বাগরাকোট। নির্দিষ্টভাবে বললে মীনামােড়। | চুইখিম! নামটাই কেমন যেন রূপকথার মতাে, তাইনা? আক্ষরিক অর্থেই চুইখিম উত্তরবঙ্গের অনন্য প্রকৃতির বুকে পল্লবিত এক পাহাড়ি রূপকথা। মীনামােড় থেকে চুইখিমগামী রাস্তায় প্রথমে পরে জমজমাট কিছু জনপদ, দোকান বাজার ও আর্মি হেডকোয়ার্টার। এইসব ছাড়িয়ে যেতে না যেতেই প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। শুরু হয়ে যায় চড়াই-উত্রাইয়ের দুষ্টু খেলা— মানে ওঠা আর নামা। তবে, ওঠাই বেশি। জানলাম একটা সময় কয়লাখনি ছিল এখানে। এখন বন্ধ। পথের দু'পাশে তখন চলছে ঝরাপাতার গাথাকাব্য। পাতারা উড়ছে বসন্তের বাতাসে। উড়ে উড়ে পড়ছে পাহাড়ের পথে প্রান্তরে। কিছুদিন পরই শূণ্য ডালে গজিয়ে উঠবে নতুন পাতা। তারপর বর্ষায় সেই সব পাতারা বর্ষণ গানের তালে নাচবে, দুলবে। সেই তালে তাল মেলাবে পুরাে প্রকৃতি। পাহাড়ের কোনে কোনে ছড়িয়ে পড়বে বর্ষণসঙ্গীত। এই সব অপরূপ কথা কল্পনার রামধনু রঙে রাঙিয়ে পৌছই চুইখিম। জেলা দার্জিলিং, সাব ডিভিশন কালিম্পং। অপূর্ব কিছু হস্তশিল্পের নিদর্শনও সাজানাে রয়েছে দোকানে। কাঠ, বেত, বাঁশের তৈরি সেইসব উপকরণ উন্নত শিল্পগুণে সমৃদ্ধ। তৈরি করছেন অঞ্চলের মানুষরাই।
এবার আর একটি ছােট্ট পাড়ায়। সব মিলিয়ে পাঁচ/ছয় ঘর। উচ্চতা ৩৫০০ ফুট। যেদিকে চোখ যায় শুধুই পাহাড়। তারই ঢালে চাষবাস। সম্প্রতি স্ট্রবেরি চাষ শুরু হয়েছে এখানে। একটি বাড়িতে দেখলাম স্ট্রবেরি উৎপাদনের পর তা শহরে আনার ব্যবস্থা হচ্ছে। মিষ্টি গন্ধে ম ম বাতাস। টাটকা স্ট্রবেরির স্বাদগ্রহণ, সেও এক না ভােলা অভিজ্ঞতা। এছাড়াও রান্নাঘরের অতি চেনা তেজপাতা গাছের দেখা পাওয়াও ছিল এক বিস্ময়।
উত্তরবঙ্গের আর সব পাহাড়ি অঞ্চলের মতাে এখানেও জৈব পদ্ধতিতেই চাষবাস হয়। একটি পরিবারে, তাদেরই রান্না ডাল, শাক-সবজিতে মিলল জৈব চাষে উৎপন্ন ফসলের সুস্বাদ। এছাড়াও গরম ভাত, অসাধারণ এক চিকেনের প্রিপারেশনে জমে গেল লাঞ্চ।
এবার ফেরার পালা। সূর্য হেলে পড়ছে পশ্চিমে। নরম রােদ ছড়িয়ে পড়ছে চুইখিমের প্রান্তরে। শুকনাে পাতার আলপনা পথের দু’পাশে। যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন গাছেরা বিদায় জানায়। ঘরে ফেরা গরুর দল চলে যায় ঘন্টা বাজিয়ে। গরু চরানাে মানুষটি আত্মীয়ের হাসি হাসেন। সব মিলিয়ে বড়ই মনােরম এক বিকেল। দেখতে দেখতে ন্যাশনাল হাইওয়ে। ছুটছে গাড়িরা। সেই দলে আমরাও। সামনে ডুবন্ত সূর্য। সন্ধ্যা নামতে অবশ্য আরও একটু দেরি। আমরা ফিরি শিলিগুড়ি, কয়েকঘণ্টার চুইখিম বাসের স্মৃতিকে হৃদয়ে রেখে।
0 Comments