Shortly before Kalimpong Bazaar, our car turned right. Relatively secluded path. A couple of houses far away. The road is almost deserted. The destination is Chibo. Six villages in Kalimpong. Many of them did not know their names.

কালিম্পঙ বাজারের একটু আগে হঠাই ডানদিকে ঘুরে যায় আমাদের গাড়ি। অপেক্ষাকৃত নির্জন পথ। অনেকটা দুরে দুরে একটিদুটি ঘর। রাস্তা প্রায় জনশূণ্য। গন্তব্য চিবাে। কালিম্পঙের ছােট এক গ্রাম। অনেকেই নাম শােনেননি এখনও চড়াই উত্রাই পার হয়ে বেশ কয়েকটি মােড় ঘুরে পৌছলাম গন্তব্যে চিবােতে।

গাড়ি যেখানে থামল, সেখান থেকে অনেকটা উঁচুতে উঠে গিয়েছে সরু সিঁড়ি— তাও বেশ এঁকেবেঁকে। আমার দুই সঙ্গী ভাই তরতর করে উঠে যায় সেই সিঁড়ি বেয়ে। আমি থমকাই। পারব তাে? পাহাড়ে এসে এমন ঘটনার মুখােমুখি এই প্রথম অবশ্য নয়! যাই হােক হােটেলের এক কর্মীর সহৃদয় সহযােগিতায় উঠে পড়ি ওপরে। ওপরে মানে মােটামুটি ৫০০০ ফুট। সামনেই বেশ প্রশস্থ এক টেরেস। সেখানে দাঁড়িয়ে যতদূর চোখ যায় পাহাড়ের সারি, মাঝে মাঝে জঙ্গল, তারই ফাকে ফাকে ছােট ছােট গ্রাম। ততক্ষণে সূর্য অনেকটাই হেলে পড়েছে। রােদুরের রঙ ফিকে হচ্ছে। স্নান করে লাঞ্চ- গরম গরম ভাত, ডাল, সবজি, পাপড়, স্যালাড সঙ্গে আচার। তৃপ্তি ও ক্ষুধার নিবৃত্তি দুইই হল। লাঞ্চ করে টেরেসে বসি। আকাশের রঙে গােধূলির লালিমা। চারপাশে কোনও শব্দ নেই, শুধু পাখির ডাক। ওরা তখন একে একে ঘরে ফিরছে। অন্যদিকে অস্তগামী সূর্যের নরম আলাে গায়ে মেখে নিচ্ছে ফুলের দল।

তথাকথিত ট্যুরিস্ট পয়েন্ট নয় বলেই বােধহয় কালিম্পঙের এই পাহড়ি গ্রাম এখনও হারায়নি তার চরিত্র। পবিত্র নির্জনতা এখনও ঘিরে আছে চিবাের পাহাড়-জঙ্গল-জনপদকে। হােটেলের টেরেস তাে বটেই, বিল্ডিংয়ের লাগােয়া বাগানেও অজস্র ফুল গাছের সম্ভার। রয়েছে ক্যাকটাস এবং অর্কিডও। কপাল ভাল থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযােগ ওই টেরেস থেকেই। আমরা অবশ্য অপরূপ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখেই মন ভরাই। ছিল রঙবেরঙের প্রজাপতি দর্শনও। ফুলের মধু চেটেপুটে খাচ্ছে তারা। সে এক স্বর্গীয় অনুভব। প্রকৃতির নানা অনুষঙ্গ এমনভাবেই আকর্ষণীয় করে তুলেছে চিবােকে। | ঝকঝকে পরিষ্কার ব্যবস্থাদি, আন্তরিক পরিষেবা ও সুস্বাদু খানাপিনায় দু’টো দিন কোথা দিয়ে কেটে যায়। আমরা হাজির ছুটির অবকাশে। সেই অবকাশের আলস্যেই দেখি এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা। কঠোর, কঠিন, প্রতিনিরন্তর লড়াই - তবু আবালবৃদ্ধবনিতা খুশি, তৃপ্ত, শান্ত। প্রাণচাঞ্চল্য আছে, কিন্তু অধৈর্য নেই, নেই প্রতিযােগিতার তাড়াহুড়াে। | নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বা শিলিগুড়ি বাস স্টপ, যেদিক দিয়েই যান, চিবাের দূরত্ব ৭২ কিমি। গ্রামে মােট ২০০০ ঘর, বসবাসকারীর সংখ্যা ৮০০০ মােটামুটি। মূল জীবিকা চাষ, পুরােপুরি জৈব পদ্ধতিতে চলে এখানকার কৃষি ব্যবস্থা। ফলে এ ক'দিন শাক-সবজি-ডাল যেটাই খাই তার স্বাদই আলাদা। জলও বেশ ভাল, ফলে হজমও হয় দ্রুত। চাষের বাইরে ছােটখাট দোকান আছে কিছু। অনেকেই কাজের খোঁজে বাইরেও যান, বিশেষত তরুণরা। সৎ নির্লোভ, পরিশ্রমী মানুষগুলি অল্পে খুশি। ফলে জীবন যাত্রায় অশান্তি কম। উৎসবের ক্ষেত্রে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ক্রিসমাস বেশ বড় করে পালিত হয়।

চিবাে যাওয়ার জন্য, উত্তরবঙ্গগামী যে কোনও ট্রেনে নিউজলপাইগুড়ি অথবা বাসে শিলিগুড়ি। সেখান থেকে গাড়িতে চিবাে। গাড়িতে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা আড়াই। যাওয়ার উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর। ফুলের বাহার মার্চ-এপ্রিল। পাখি আর প্রজাপতিদের সব থেকে বেশি দেখা পাবেন সেপ্টেম্বরে। বর্ষা এড়িয়ে চলাই ভাল। কাছাকাছি দেখার মধ্যে রয়েছে একটি গুম্ফা, নাম দূরপিন। এছাড়াও রয়েছে ক্লাউডএন্ড ভিউ পয়েন্ট, পাইন ভিউ নার্সারি, গলফ কোর্স, টেগাের হাউস, দেলাে। জঙ্গলে রয়েছে লেপার্ড, হরিণ, খরগােস এবং ময়ূর। ভাগ্যে থাকলে তাদের দেখাও পাবেন। | আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে তাপমাত্রা বেশ নেমে যায় কখনও কখনও সেটা শূণ্যতেও পৌঁছয়। সেই সময়টায় গেলে বাড়তি শীতপােশাক সঙ্গে রাখুন অবশ্যই। খাওয়ার ক্ষেত্রে ডিম, চিকেন, দুধ, নানা শাকসবজি পাবেন। আর পাবেন তুলনাহীন মােমাে। শিলিগুড়ি থেকে মাছের চালানও হয়। দ্য চিবাে ইন-এ মােটামুটি ৩০-৩৫ জন একসঙ্গে থাকতে পারেন। ঘর ভাড়া ১০০০-২২০০ পর্যন্ত। ডাবল, ট্রিপল, ফোর/ফাইভ বেড যুক্ত ঘর রয়েছে। খাওয়ার খরচ আলাদা, যা আয়ত্তের মধ্যেই।